অথবা, অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।
অথবা, অপরাধী ও বিচ্যুতির মাঝে পার্থক্য সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, অপরাধ ও বিচ্যুতির মাঝে বৈসাদৃশ্যসমূহ সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : অবাঞ্ছিত আচরণ হলো’ অপরাধ। অন্যদিকে, কোনো ব্যক্তি যখন সমাজস্বীকৃত পন্থায় আচরণ না করে সমাজের অস্বীকৃত পন্থায় আচরণ করে, সামাজিক সংহতি ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে তখন এ ধরনের আচরণকে বিচ্যুতি আচরণ বলা হয় ।
অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য : নিম্নে অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো :
১. সংজ্ঞা : আইন অমান্যই অপরাধ। সমাজ ও আইন কর্তৃক অস্বীকৃত ও অস্বাভাবিক আচরণই অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য। অপরদিকে, সমাজে এমন অনেক কাজ ও আচরণ লক্ষ্য করা যায় যা আইন নিষিদ্ধ না হলেও সামাজিক স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত আচরণের পরিপন্থী তা বিচ্যুতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
২. আওতা : আইন বিরোধী বা আইনভঙ্গমূলক কাজ অপরাধের আওতায় পড়ে। অপরদিকে, সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ বা আচরণ বিচ্যুতির পর্যায়ে পড়ে।
৩. আচরণ : সব অপরাধই সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণ। কিন্তু সব সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণ অপরাধ নয়।
৪. সামাজিক পরিবর্তন : সামাজিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণের কোনো কোনো দিক কখনো কখনো অপরাধমূলক আচরণে পরিণত হতে পারে। অপরদিকে, যতই সামাজিক পরিবর্তন ঘটুক না কেন অপরাধ সবসময় বিচ্যুতিমূলক আচরণের মধ্যে পড়ে।
৫. ধরন : কোনো কাজ আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ হলে অথবা আইন অনুসারে নির্ধারিত হলে অথবা আইন অনুসারে আরো অবহেলা হলে তা অপরাধের আওতায় পড়ে। কিন্তু সমাজের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও রীতিনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব অনৈসল্গ খাপছাড়া, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং সর্বোপরি সমাজের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ বিরোধী তা হলো বিচ্যুতি ।
৬. নিয়ন্ত্রণ : অপরাধ হচ্ছে এমন কাজ বা আচরণ যা আনুষ্ঠানিক কোনো বাহন বা সংস্থা দ্বারা পর্যাপ্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কিন্তু বিচ্যুতিমূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা অপরাধ থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ।
৭. শান্তি : অপরাধমূলক আচরণের জন্য রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক শাস্তি নির্ধারিত থাকে। কিন্তু বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য শাস্তি নির্ধারিত নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধ ও বিচ্যুতি মূলত এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আইন বিরোধী আচরণ, যা সমাজের সদস্য কর্তৃক গ্রহণযোগ্য নয় ।