অথবা, অপরাধের কারণতত্ত্বে তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তুমি কী জান? সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজ ও আইন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আইন ও সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে অপরাধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। অপরাধ সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা, সংহতি, নিরাপত্তা, মূল্যবোধ ও প্রগতি নষ্ট করে। মানুষের যেসব কাজ সমাজের চোখে অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য তাই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
অপরাধের কারণতত্ত্বে তাত্ত্বিক দৃষ্টভঙ্গিসমূহ : অপরাধের কারণ তত্ত্বে যেসব উল্লেখযোগ্য কারণকে অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়, তা কয়েকটি তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আনা হয়েছে। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো :
১. জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গি : অপরাধবিজ্ঞানী Lombroso অপরাধের কারণ বিশেষণে জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্য নিয়েছেন। তাঁর মতে, অপরাধী হলো ত্রুটিপূর্ণ বা অস্বাভাবিক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ চোখ, মাংসল এবং স্ফীতি ঠোঁট, দীর্ঘ বাহু, অস্বাভাবিক থুতনি, বক্রাকৃতির নাকসহ শারীরিকভাবে নানা ধরনের বিকৃত লোক বেশি অপরাধপ্রবণ হয়।
২. মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি : ফ্রয়েডীয় মনোবিশেষণ অনুযায়ী মানুষ জীবন প্রবৃত্তির তাড়নায় বাঁচার অভিপ্রায়ে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় বলে বাধ্য হয়ে অপরাধ করে। আবার মরণ প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে ধ্বংসাত্মক, হিংসাত্মক কাজ ও আত্মহত্যার চেষ্টা করার মাধ্যমে অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়। আবার ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশ না হলেও অপরাধমূলক আচরণ দেখা দিতে পারে।
৩. অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি : মার্কসীয় দৃষ্টিতে বলা যায় যে, পুঁজিবাদী অর্থনীতির শোষণের ফলশ্রুতি হলো অপরাধ। বস্তুত তিনি ‘Criminality and Economic Conditions’ নামক গ্রন্থে মার্কসীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলেছেন যে, “বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ফলে সৃষ্টি হয় বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা ও চরম দারিদ্র্য।” বস্তুত তাঁর মতে, “পুঁজিবাদ সৃষ্ট এসবের কারণে অপরাধ সংঘটিত হয়।”
৪. সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি : সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজবিজ্ঞানী Trade (ট্রেড) বলেছেন যে, “অনুকরণই অপরাধের জন্য দায়ী।” তার মতে, মানুষ অপরাধমূলক আচরণ অনুকরণের মাধ্যমে শিখে। অপরাধবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড অপরাধের কারণ বিশেষণে বিভিন্নমুখী মেলামেশাকে দায়ী করেন। তাঁর মতে, অপরাধমূলক আচরণ গোষ্ঠীর অপরাধী চরিত্র থেকে সংক্রমিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, দেশের প্রচলিত আইন, রীতিনীতি ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপকেই অপরাধ বলে। আর এ অপরাধ ব্যক্তি জীবনে অধঃপতন, সামাজিক জীবনে সমস্যা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে স্থিতিহীনতার সৃষ্টি করে।