সে সময় এই বিচারক আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যা বলতেন, আমিও তাই এবং তেমনি করেই বলেছি।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু স্বমতে আস্থাশীল প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া
প্রসঙ্গ : বিচারককে কবির অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করলে বিচারক ও কবির জবানবন্দীই অনুসরণ করতেন বলে রাজবন্দী কবি তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছন।
বিশ্লেষণ : পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণাটুকু কেবল যাঁর কোন অঙ্গ পুড়েছে তিনিই বোঝেন। একইভাবে পরাধীনতার জ্বালা কেবল পরাধীন মানুষই হাড়ে হাড়ে টের পায়। পরাধীনতা মানেই অভাব অনটন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, শোষণ-বঞ্চনার তীব্র দহন। পরাধীনতা মানেই বিমাতাসুলভ রুঢ় আচরণ অমর্যাদা অপরিমেয় মানসিক যন্ত্রণা। পরাধীনতা মানেই ধুঁকে ধুঁকে প্রতিভার মৃত্যু, জীবনের অবমূল্যায়ন। পরাধীনতার অর্থ স্বাতন্ত্র্য স্বকীয়তার অপমৃত্যু। কবি পরাধীনতার গ্লানিকে ঘৃণা করেন। এ কারণে তিনি তাঁর সচেতনতা অন্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চান। আত্মাধিকার আত্মমর্যাদা সম্পর্কে ভারতবাসী স্পষ্ট ধারণা লাভ করে তা অর্জনের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হোক- এ তাঁর একান্ত কামনা। কারণ উড়ে এসে জুড়ে বসা শাসকগোষ্ঠী কখনো বিনা সংগ্রামে বিনা রক্তপাতে কিছু মেনে নেয় না। আর সেটা তারা সমস্ত হৃদয় দিয়ে অনুভব করে তখন, যখন নিজেরা স্বাধীনতা হারায়। রাজার নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকের পরাধীনতার গ্লানি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যদি থাকতো অর্থাৎ যদি ইংল্যান্ড ভারতের অধীনস্থ উপনিবেশ হতো তাহলে তারা ‘আধমরা’ অসচেতন দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারতো। কবি যেসব কথা লিখেছেন, বলেছেন- সেসব কথা সে অবস্থায় আজকের বিচারকই উচ্চারণ করতেন একইভাবে। কেননা পরাধীনতার চরিত্রের মধ্যে দেশে দেশে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং কবি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করতে যা লিখেছেন তা সে প্রেক্ষাপটে সঠিক।
মন্তব্য: অবস্থান অনুসারে কবির অনুভব বাস্তবসম্মত হলেও ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী বা তাদের প্রতিনিধিরা তা কার্যকরভাবে বিবেচনা করতে অক্ষমই হয়ে থাকে।