সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:০৪। সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি উল্লেখপূর্বক এর উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি কী? সামাজিক গবেষণার উদ্দেশ্য আলোচনা কর।


উত্তর ভূমিকা : বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, সামাজিক ক্ষেত্রে পদার্থগত পরিবর্তন, মানুষের রুচি, আচার আচরণ ও মূল্যবোধ পরিবর্তনের ফলে বর্তমান সমাজ এক জটিল ও দুরূহ অবস্থায় রূপ লাভ করেছে। প্রত্যেক সমাজ বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত। তবে সময়োপযোগী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি । আর এসব ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের অনুসন্ধান ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর এসব ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের অনুসন্ধান লাভ করা যায় গবেষণার মাধ্যমে। তাই বর্তমানে সামাজিক উন্নয়নের অবিসংবাদিত শর্ত হিসেবে সামাজিক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি : উদ্দেশগতভাবে যে কোনো গবেষণাই নতুন জ্ঞান অর্জনের দ্বারা উপস্থিত জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও তত্ত্বগত দিকে সমৃদ্ধ করা । প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সাথে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনায় বেগ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তবে এখানে একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি গবেষণার শর্ত এবং সাবধানতা হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতিগত বিজ্ঞানসমূহ সেসব দিক নিয়ে পর্যালোচনা করে যাদের কোনো নির্ভরশীল চলক নেই অর্থাৎ স্বতন্ত্র । অন্যদিকে, সামাজিক গবেষণার প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ অত্যন্ত নির্ভরশীল। যেমন- Behaviour, habits, out looks, approaches ইত্যাদি বিষয়গুলো শুধু সমাজ থেকে ভিন্ন নয়, ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিতে যথেষ্ট পার্থক্য নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এক ভিন্ন ব্যাপার। তবুও আধুনিককালে সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষের সেসব আচরণগত বিষয়ের প্রতি ঐকমত্য পোষণ করেন, যা সমাজব্যবস্থায় মোটামুটি অভিন্ন। প্রকৃতিগত বিজ্ঞানকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পূর্ব থেকে অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। সেজন্য এর সাবধানতার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও সাবধানতার দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কর্ম ও কারণের যথার্থ সম্পর্ক নির্ধারণ করা একটি জটিল সমস্যা। কারণ এরা একটি অন্যটির সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত বিধায় স্বতন্ত্র এবং তুলনামূলক প্রভাব নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু Pure Science এর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা ঘটে না। Pure Science বা প্রকৃতি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আদর্শ ও মূল্যবোধ তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পরে না। কিন্তু সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে । বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে যেমন- হাতিয়ার তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে সামাজিক গবেষণায়ও তেমনি হবে আশা করা যায়।

সামাজিক গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ : ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধনের জন্যই সামাজিক গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে । সভ্যতা ও সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে । নিম্নে সামাজিক গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচিত হলো।

১. সত্য আবিষ্কার : সামাজিক গবেষণা অতীত ও বর্তমানে সমাজব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ সমাজব্যবস্থা কিরকম হবে সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণা প্রদান করে থাকে। সামাজিক গবেষণা সত্য আবিষ্কার করার কাজে নিযুক্ত বলে সত্য ঘটনা আবিষ্কার করে ভ্রান্ত বা ভুল তত্ত্ব পরিহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।


২. অনুসন্ধান পদ্ধতির উন্নয়ন : সামাজিক গবেষণার আর একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো অনুসন্ধান পদ্ধতির উন্নয়ন করা । সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে তা সব ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রত্যেক পদ্ধতিরই সুবিধা এবং অসুবিধা আছে বলে সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে গবেষণার উপযুক্ত ও ত্রুটিমুক্ত পদ্ধতি নির্ণয়ের জন্য গবেষণা কাজ সম্পাদন করে থাকেন।

৩. কার্যকারণ সম্পর্ক উদ্ঘাটন : সামাজিক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক উদ্ঘাটন করা। সমাজ গবেষকরা কোন ধরনের সামাজিক আস্থা, কোন ধরনের সামাজিক আচরণ তৈরি করে তা উদ্ঘাটন করেন এবং সাথে সাথে এসব জ্ঞান ভবিষ্যতে সমাজে কোন ধরনের পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন বা ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেন।


৪. সামাজিক সমস্যার নিষ্পত্তি : বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন- জনসংখ্যা সমস্যা, খাদ্যঘাটতি, দুর্নীতি, বেকারত্ব, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন ইত্যাদি সমস্যার নিষ্পত্তি সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সম্ভব।

৫. সম্প্রীতি ও সম্ভাৰ সৃষ্টি : পৃথিবীতে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও সম্ভাব সৃষ্টি করা সামাজিক গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি যেখানেই থাক না কেন উদ্দেশ্যের ক্ষেত্র দিন দিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে গেলে আমরা উন্নতির শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হঝে। উন্নত সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সমাধান করা যাবে।