সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ লিখ।

অথবা, সংক্ষেপে সাক্ষাৎকারের অসুবিধাগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির দুর্বল দিকসমূহ উপস্থাপন কর।
অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে সাক্ষাৎকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী কৌশল হিসেবে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাবলি সন্তোষজনকভাবে নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে । এ পদ্ধতির একাধিক যেমন সুবিধা রয়েছে, ঠিক অন্যদিকে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে ।
সাক্ষাৎকারের অসুবিধাসমূহ : সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের বহুল ব্যবহৃত ও কার্যকরী কৌশল হিসেবে সাক্ষাৎকারের কতিপয় সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কতিপয় বাস্তব অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ব্যয়বহুল কৌশল : সাক্ষাৎকার একটি ব্যয়বহুল তথ্য সংগ্রহ কৌশল। কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ, বেতনভাতা, ভ্রমণভাতা, নমুনা নির্বাচন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, গণযোগাযোগ প্রভৃতির জন্য প্রচুর অর্থের দরকার হয় বলে এটি একটি ব্যয়বহুল কৌশল হিসেবে খ্যাত ।
২. পক্ষপাতদুষ্টতা : সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মুখোমুখি সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, নৈতিকতা ইত্যাদি দ্বারা উত্তরদাতাকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। ফলশ্রুতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্টতা দেখা দেয়।
৩. আত্মগোপনের সুযোগের অভাব : ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে উত্তরদাতার আত্মগোপনের সুযোগ থাকলেও সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে উত্তরদাতার আত্মগোপনের সুযোগ থাকে না। কারণ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার পূর্ণ পরিচয় জানেন । এর ফলে উত্তরদাতা অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দিতে চান না। বিশেষকরে তার নিকট থেকে সংবেদনশীল অনেক প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে বের করে আনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ।
৪. সাক্ষাৎদাতাকে রাজি করানো কষ্টকর : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় অনিচ্ছুক উত্তরদাতাকে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করে এবং প্রেষণা দেয়া সত্ত্বেও উত্তরদানে রাজি করানো খুবই কষ্টকর। এমতাবস্থায় উত্তরদাতা সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ মনোনিবেশ করেন না। ফলে এরূপ ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
৫. স্মৃতির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তরদাতাকে চিন্তাভাবনা এবং অন্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে এবং নথিপত্র না দেখে উত্তর দিতে হয় বলে স্মৃতির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হতে হয় । এ অবস্থায় উত্তরদাতা প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায় ।
৬. অতি উদ্দীপনাজনিত সমস্যা : সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য লাভের জন্য উত্তরদাতাকে প্রেষণা বা উদ্দীপনা দেয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় অত্যধিক প্রেষণার কারণে উত্তরদাতা মানসিক স্থিরতা হারিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে বেশি কথা বলতে গিয়ে প্রকৃত বক্তব্য থেকে দূরে সরে যান। এর ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না ।
৭. উত্তরদাতার সহজলভ্যতার অভাব : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় প্রায় সময়ই নমুনাভুক্ত অনেক উত্তরদাতাকে বিভিন্ন কারণে যেমন- বাসস্থান পরিবর্তন, মৃত্যু, কর্মব্যস্ততা, বিদেশ গমন প্রভৃতি কারণে যথাসময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষকরে গবেষণা এলাকা যদি ব্যাপক বিস্তৃত হয় তাহলে এ সমস্যা আরো প্রকট হয় । অধিকন্তু সামাজিক গতিশীলতার সমাজে উত্তরদাতাকে ঘরে পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার । ফলে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা খুবই অসুবিধাজনক ।
৮. সময় সাপেক্ষ : সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক তথ ্য সংগ্রহের অন্যান্য কৌশলের তুলনায় সাক্ষাৎকার সময় সাপেক্ষ কৌশল । কারণ প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মতৎপরতা এবং মাঠপর্যায়ে উত্তরদাতাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সাক্ষাৎকার পদ্ধতিটি একটি প্রাচীনতম পদ্ধতি হলেও আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্বের অধিকাংশ সমাজ গবেষণার প্রাসঙ্গিক তথ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। এ পদ্ধতি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শেখায়, তবে তা সত্ত্বেও এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হয় ।