রাস্তার তৈরির পূর্বের মাউলতলা এবং রাস্তা তৈরির পরের মাউলতলা গ্রামের মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ কর।

অথবা, “কিন্তু অতীতের শত শত বৎসরে যাহা ঘটে নাই, দুইশত বৎসরের ইংরেজ শাসনের ফলে এবার এখানে তাহাই আত্মপ্রকাশ করিল।”- ব্যাখ্যা কর।
উৎস :
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে উদ্ধৃত বাক্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মাউলতলা ছিল একটি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন গ্রাম। তাই বাইরের পৃথিবীর কোন আনন্দ উত্তেজনা কিংবা অবসাদ এখানে ছায়া ফেলতে পারেনি। মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, দিল্লিতে অনেক নতুন নতুন রাজবংশের উত্থান ঘটেছে, পুরাতন রাজশক্তির পতন ঘটেছে, কিন্তু তার বিন্দুমাত্র আলোড়ন এখানে এসে পৌঁছেনি। সম্পূর্ণ নিজস্ব ছন্দে, অনেকটা মধ্যযুগীয় আবহে বয়ে চলেছে এই জীবনধারা। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইংরেজ শাসনও এখানে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ইংরেজ আমলের একেবারে শেষ দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে যোগাযোগ ব্যবস্থার খানিকটা উন্নয়নের ফলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। নতুন তৈরি রাস্তার বদৌলতে শহরের সাথে এই গ্রামীণ জীবনের একটা সম্পর্ক রচিত হয়। আর এ সূত্র ধরেই মাউলতলা সম্পর্কিত হয় গোটা দেশের উত্তেজনা অবসাদের সাথেই। যুদ্ধ ও মন্বন্তরের তাপ এসে লাগে তার গায়ে। যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের প্রতিক্রিয়ায় গোটা দেশের মতো মাউলতলাতেও বৃদ্ধি ঘটে দ্রব্যমূল্যের। সে মূল্য বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে, তা জীবনের মূল্যকেও ছাড়িয়ে যায়। যুদ্ধের দাপট আর মন্বন্তরের করাল থাবার কাছে মানুষের জীবন অনেকাংশেই মূল্যহীন ও অসহায় হয়ে পড়ে। শহরের সাথে যুক্ত সড়কপথে গ্রামে এসে ঢোকে শহরের রোগব্যাধি। দেখা দেয় অবক্ষয়। প্রসার ঘটে দুর্নীতি আর চোরাবাজারের। অথচ এসব নাগরিক ব্যাধি ও বিকার মাউলতলার জীবনে কোনদিনই ছিল না। এসবই ইংরেজ শাসনের উপহার- নয়া সড়ক যার বাহন।
মন্তব্য : ইংরেজ শাসন এ দেশের গ্রামসমূহের স্বনির্ভরতার ঐতিহ্যকে সমূলে বিনাশ করেছিল।