• March 24, 2023

রাজার বাণী বুদ্বুদ, আমার বাণী সীমাহারা সমুদ্র।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত
প্রসঙ্গ : রাজার বাণীকে বুদ্বুদের সাথে এবং বিদ্রোহী কবির বাণীকে অসীম সমুদ্রের সাথে তুলনা করতে গিয়ে কথাটা বলা
বিশ্লেষণ : রাজার বাণী সীমাবদ্ধ, তা সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন। রাজার দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর স্বার্থ ও বিলাসিতার সাথে গ্রথিত। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যেও রয়েছে লাভ-লোকসানের চুলচেরা হিসাব। যে কারণে অন্যায়, অসত্য, শোষণ, অপশাসনের দিকে তাঁকে হাত প্রসারিত করতে হয়। সে সাথে যোগ হয় বিদ্বেষপ্রসূত ষড়যন্ত্র। ফলে তাঁর বাণী হয়ে পড়ে একদেশদর্শী ও বিতর্কিত। এ কারণেই রাজার বাণীকে বিন্দু বিন্দু জল অর্থাৎ বুদ্বুদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অন্যদিকে কবির বাণী নিরপেক্ষ। তাঁর মধ্যে রয়েছে কল্যাণকামী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি সবার মঙ্গলের জন্যই গান, বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে বাণী প্রচার করেন। সে বাণীর মধ্যে রয়েছে অধিকারহীন, দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষকে সচেতন করার অমোঘ মন্ত্র। হীনমনা ও ধুরন্ধর প্রকৃতির রাজার কাজকর্মের, আইনকানুনের রহস্য যারা বুঝে না, কবির বাণী তাদেরকে বুঝতে শেখায়, প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধেই কবির বিদ্রোহ। অনাচার, শোষণের বিরুদ্ধেই তাঁর রণহুঙ্কার। নিজের জন্য কবির কোন লোভ-লালসা নেই। নিজের স্বার্থ তাঁর কাছে তুচ্ছ। সকলের স্বাথই তাঁর স্বার্থ, সকলের লাভই তাঁর লাভ। কেননা, তিনি সকলেরই একজন। এ কারণে রাজার ক্ষেত্র বা প্রেক্ষাপটের চেয়ে কবির
ক্ষেত্র বা প্রেক্ষাপট অনেক বড়। কবি বুদ্বুদ বিন্দু নিয়ে কাজ করেন না। সমুদ্রের মতো বিশাল এলাকা নিয়ে এবং অসংখ্য মানুষের ভাগ্যের কল্যাণকর পরিবর্তন নিয়েই তাঁর কর্মভাবনা।
মন্তব্য : প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা, অর্থ-সম্পদ এবং বিলাসিতাই রাজার কাছে মুখ্য, প্রজাসাধারণের কল্যাণ সাধন তাঁর কাছে গৌণ। এজন্য তাঁর বাণী সাধারণের কাছে গৌণ, বুদ্বুদ বিন্দু। আর কবির মতো যারা জনতার কথা বলে অকাতরে কারাবরণ করে, তারা জনতার কাছে বিশাল সমুদ্রের মতো অতল, শ্রদ্ধার ও সম্মানের।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!