যৌথ পরিবারের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর ।

অথবা, যৌথ পরিবারের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, যৌথ পরিবারের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
অথবা, যৌথ পরিবারে বিদ্যমান মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের দলবদ্ধ জীবনের প্রাচীনতম রূপটি পরিবার। পরিবারকে তাই সমাজের “Ancient, Basic and Smallest” সংগঠন বলা হয়। বস্তুত পরিবারেই মানুষের জন্ম, বিকাশলাভ করে। এজন্যই Robert Bierstedt মন্তব্য করেছেন, “Of all the groups that affect the lives of the individuals none touches so intimately or so continuously as does the family.”
যৌথ পরিবারের মৌলিক বৈশিষ্ট্য : নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. বৃহদায়তন : পিতামাতা, সন্তানসন্ততি, নাতিনাতনি প্রভৃতি সকলে এক সাথে একত্রে একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস করে। অনেক সময় নিকট আত্মীয়রাও বসবাস করে। এ ধরনের পরিবারে সদস্যদের নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ সম্ভব নয়, তবে অনেক সময় তা শতাধিক হতে পারে।
২. অভিন্ন আবাসন : যৌথ পরিবারের সদস্যগণ একই ছাদের নিচে অর্থাৎ অভিন্ন আবাসনে বসবাস করেন। অর্থাৎ এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা সাধারণত একই গৃহে বসবাস করেন। অবশ্য অনেক সময় বসবাসের জন্য পাশাপাশি বা সংলগ্ন কয়েকটি ঘরও থাকতে পারে। তাই আমরা যৌথ পরিবারগুলোতে পাশাপাশি সংলগ্ন কয়েকটি ঘর দেখতে পাই। তবে খাওয়াদাওয়া যৌথ পরিবারে একই সাথে হয়।
৩. সম্পত্তির যৌথ মালিকানা : যৌথ পরিবারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সম্পত্তির যৌথ মালিকানা। যৌথ পরিবারে সম্পদের বা সম্পত্তির যৌথ মালিকানা থাকে। উৎপাদন, ভোগ প্রভৃতি যৌথ ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়। অনেকে একে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করেন। এ ধরনের পরিবারে বা পরিবার ব্যবস্থায় পরিবারের প্রধান বা কর্তা অনেকাংশে ওছির ভূমিকা পালন করেন। তিনিই পরিবারের সকল সদস্যদের বৈষয়িক চাহিদা নির্ধারণ করেন এবং সে অনুসারে ভোগের অধিকার দেন। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় এই যে, পরিবারের সকল সদস্যদের যাবতীয় রোজগার পরিবারের কর্তার হাতে একত্রিত হয়। তিনি প্রয়োজনমতো সবাইকে সেখান থেকে বণ্টন করেন।
৪. ধর্মীয় ঐক্য : যৌথ পরিবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের সদস্যদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য। পরিবারের সদস্যগণ সাধারণত একই রকম ধর্মীয় চেতনার দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ধর্মবিশ্বাসে সাধারণত কোনো বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয় না। তাদের নির্দিষ্ট একই পরমসত্তার আরাধনা করেন এবং প্রায়শ আহারের মতো প্রার্থনাও একই সাথে করে থাকেন। যৌথ পরিবারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে। আনন্দে দুঃখে যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে সকলেই অংশ নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যৌথ পরিবারের সদস্যগণ সংখ্যায় বহু। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া যৌথ পরিবার গঠন সম্ভব হতে পারে না। যৌথ পরিবারের সাংগঠনিক ভিত্তি দৃঢ় হয় সহযোগিতার নীতির দ্বারা। এ কারণে আমরা দেখি যে, যখনই সহযোগিতার নীতিটি দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই যৌথ পরিবারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেটি ভেঙে একাধিক একক পরিবারের সৃষ্টি হয়। যৌথ পরিবারের সহযোগিতার নীতিকে আমরা আখ্যায়িত করতে পারি, সকলের জন্য সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।