প্রশ্নের উত্তর

যৌতুক কী?

অথবা, যৌতুক প্রথার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, যৌতুক বলতে কী বুঝায়?
অথবা, যৌতুক কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
আমাদের জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই নারী। বাংলাদেশের নারীরা পূর্বের তুলনায় উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে। আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্যতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু এখনও কিছু কিছু সামাজিক কুপ্রথা নারী সমাজকে আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেও এগুলো বড় হাতিয়ার। যৌতুক হচ্ছে তেমনি একটি সামাজিক কুপ্রথা। যৌতুক প্রথা কোথাও কোথাও সরাসরি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছদ্মাবরণে সমাজে টিকে আছে। যৌতুকের কারণেই নির্যাতিত হচ্ছে নারী সমাজের একটি বড় অংশ।
যৌতুক প্রথার উৎপত্তি : হিন্দু সমাজে যৌতুক প্রথার উৎপত্তি। হিন্দু আইনে কন্যা সন্তান পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না বিধায় পাত্রস্থ করার সময় নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী দেওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। সময়ের পরিবর্তনে এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের পরিবর্তন হয়ে এটা যৌতুক প্রথায় রূপ লাভ করে। ইসলাম ধর্মে যৌতুক প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু হিন্দু
সমাজের অনুকরণে মুসলিম সমাজে এ সর্বনাশা প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
যৌতুক (Dowry) : সাধারণ অর্থে পাত্র ও পাত্রীপক্ষ কর্তৃক পাত্রীকে বা পাত্রকে প্রদেয় অর্থ সম্পত্তি বা অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীকে যৌতুক বলা হয়। অর্থাৎ যৌতুক পাত্র-পাত্রী উভয়েই পেতে পারে। সামাজিকভাবে এ প্রথাকে উপহার, উপঢৌকন, নজরানা প্রদান, শুভেচ্ছার প্রতীক বা নিদর্শন যাই বলা হোক না কেন প্রথাটি বিশেষ করে হিন্দু সমাজে অবশ্য পালনীয়। তবে যৌতুক প্রথাটি হিন্দু সমাজে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্রমে তা মুসলিম সমাজেও অনুপ্রবেশ করেছে। যৌতুক হলো এমন একটি সামাজিক কুপ্রথা বা ঘৃণ্য প্রথা যাতে কন্যা পাত্রস্থ করার সময় কনে ও বর পক্ষের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে বরপক্ষকে নগদ অর্থ, দ্রব্যসামগ্রী বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধাদানে কন্যা পক্ষকে বাধ্য করা হয় । অর্থাৎ, যৌতুক বলতে বিবাহের এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষকে, অথবা বিবাহের কোন এক পক্ষের পিতামাতা বা অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো পক্ষকে বিবাহ মজলিশে বা বিবাহের পূর্বে বা পরে যে কোনো সময়ে বিবাহের পণরূপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত বা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বুঝায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুযোগ্য পাত্রে কন্যাকে পাত্রস্থ করার জন্য পাত্র পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে অথবা কন্যা পক্ষের আতিশয্যে যা কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয় তা যে নামেই আখ্যা দেওয়া হোক না কেন, তা যৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। যোগ্য ও অযোগ্য সব ধরনের পাত্রকে তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করা ও রাখার সামাজিক চলন বিয়ের ব্যাপার সচ্ছন্দ বোধ করে বলে তা যৌতুক নামে পরিচিত হয়েছে।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!