প্রশ্নের উত্তর

নয়ন-চারা’ গল্পের মূলভাব লিখ।

উত্তর : ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে নয়নচারা গ্রাম। গ্রামটি বন্যায় ভেসে গিয়েছে। বানভাসি মানুষেরা এসে আশ্রয় নিয়েছে শহরের ফুটপাতে। রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে এরা রাত কাটায়। সারাদিন শহরের অলিতে-গলিতে এরা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে দু’মুঠো ভাতের জন্য ঘুরে বেড়ায়। শহরের হৃদয়হীন মানুষেরা এদেরকে দূর দূর করে তাড়ায়। দুপুরে লঙ্গরখানা থেকে যে সামান্য দু’মুঠো ভাত এরা পায় তাতে পেট ভরে না। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে তাই রাতের বেলায় শুয়ে শুয়ে কঁকায়। এ বানভাসি মানুষদের একজন
আমু। আমুর অভিজ্ঞতাই ‘নয়নচারা’ গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। ভুতনি, ভুতো প্রমুখের সাথে আমু শহরের দুঃসহ জীবন কাটায়। খেতে না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় ভুতনির ভাই ভুতো মারা গেছে। এরাও যেন মরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। আমু খাবারের আশায় শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। দোকানে ঝুলানো হলুদ রঙের পাকা কলা দেখে তার লোভ জাগে। কিন্তু তা ছোঁয়ার অধিকার আমুর নেই। তাই কলাগুলো হলুদ রঙের স্বপ্নই থেকে যায়। ময়রার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আমু। দোকানি তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুকুরের মতো তেড়ে আসে। আমু ভয় পেয়ে সরে যায় সেখান থেকে। শহরের কুকুর দেখে সে বিস্মিত হয়। কুকুরগুলো শহরের মানুষদের মতো হিংস্র নয়। একদিন লাল শাড়ি পরা একটা সুন্দরী মেয়ে আমুকে দু’টো পয়সা দিয়ে চলে যায়। তার মাথার ঘনচুল দেখে আমুর মনে হয় এ চুল নিশ্চয়ই নয়নচারা গ্রামের ঝিরার মাথার চুল। আর একদিন আমু ক্ষুধার্ত পেটে একটা খাবারের হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ভিতর থেকে বিভিন্ন রকম খাদ্যের সুগন্ধ ভেসে আসে। কিন্তু দোকান থেকে একটা লোক বেরিয়ে এসে আমুর সাথে দুর্ব্যবহার করা মাত্র আমু তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রচণ্ড মার খেয়ে রক্তাক্ত আমু শহরের অচেনা রাস্তা বেয়ে চলতে থাকে। এ রাস্তার যেন শেষ নেই। একবার ভাবে, যে পথের শেষ নেই সে পথে চলে লাভ কি? চলতে চলতে ক্লান্ত-শ্রান্ত আমু নিজেকে একটা বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়ানো দেখতে পায়। হঠাৎ খুলে যায় দরজাটা। মমতাময়ী এক গৃহবধূ বেরিয়ে এসে আমুকে কিছু খাবার দেয়। বিস্মিত আমু বধূটির মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে এ কেমন মেয়ে। শহরের অন্যান্য মানুষের সাথে এর তো কোন মিল নেই। এমন মেয়ের বাড়ি শহরে হতে পারে না। এর বাড়ি নিশ্চয়ই নয়নচারা গ্রামে। আমু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে, “নয়নচারা গায়ে কি মায়ের বাড়ি?” মেয়েটি কোন উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!