তবু সারাপথ ভাবিয়া চিন্তিয়া সে এই পয়সার ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ জীবনকে পাত গড়িয়া তুলিবার সংকল্প করিল।”— কে এবং কেন এমন চিন্তায় ব্যস্ত?

উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথ জানা নাই’ শীর্ষক ছোটগল্পের গহুরালির মনোজাগতিক। শহরে বেড়াতে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে গ্রামে ফেরার পথে গহুরালি যে সংকল্প করেছিল তাই এখানে ব্যক্ত হয়েছে। গহুরালি মাউলতলা গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক। নতুন জীবন ও জীবিকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সে জোনাবালির উদ্যোগে নির্মিত নতুন সড়কে নিজের পাঁচ কুড়া জমির দুই কুড়াই দিয়ে দিয়েছিল। সড়কের কাজ শেষ হলে গহুরালিও একদিন গ্রামের অন্যান্যের মত সেজেগুজে শহরে বেড়াতে গেল। সেখানে দুই দিন ঘুরে গহুরালি বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করল। সে দেখল এখানে কেউ কারো খোঁজ নেয় না, এমনকি কুশল পর্যন্ত জানতে চায় না। ঘুরতে ঘুরতে গণিকালয়ে গিয়ে সে এক গণিকার পাল্লায় পড়ে অর্থকড়ি প্রায়ই খুইয়ে বসল। প্রতিদানে সে কী পেল তা বুঝতে পারল না। মেয়েটির ব্যবহার দেখে গহুরালি মনে মনে উপলব্ধি করল এখানে পয়সার বিনিময়ে সব জিনিসের মূল্য যাচাই হয়। পয়সাই শহরের জীবন নিয়ন্ত্রিত করছে। এরা প্রাণের কোন মূল্য দিতে জানে না। নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ মনে হলো তার। দুইদিন পর একটা বিরূপ মন নিয়ে গহুরালি গ্রামের পথ ধরল। সারা পথ ভেবেচিন্তে সে এই পয়সার ভিত্তিতেই নিজের ভবিষ্যৎ জীবনকে গড়ে তোলার সংকল্প করল। সে বুঝতে পেরেছে পয়সা ছাড়া মানুষের জীবন মূল্যহীন।
মন্তব্য : বর্তমান জামানায় পয়সার মাপকাঠিতেই মানুষের মূল্য যাচাই হয়। পয়সাহীন জীবনের কোন মূল্য নেই।