কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে আশারিয়াদের মতবাদ সংক্ষেপে লেখ ।

অথবা, আশারিয়ারা কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করেন?
অথবা, আশারিয়াদের মতে কুরআনের নিত্যতা কিরূপ?
অথবা, আশারিয়ারা কী কুরআনের নিত্যতা স্বীকার করেন?
অথবা, কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে আশারিয়া সম্প্রদায় কী বলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শন বিভিন্ন দর্শনের প্রভাবে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে গ্রিক দর্শনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রিক দর্শনের প্রভাবে যে মুতাজিলা সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছিল সে সম্প্রদায় হতে পৃথক হয়েই
আশারিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব। হিজরি তৃতীয় শতকে মুসলিম চিন্তাবিদগণ যে দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে তাদের মধ্যে একটি হলো বুদ্ধিবাদী এবং অপরটি হলো গোঁড়া রক্ষণশীল। এদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। এরূপ অবস্থায় একটি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় যারা বুদ্ধিবাদী ও গোঁড়া রক্ষণশীলদের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে। আর এ সম্প্রদায়টিই মুসলিম দর্শনে আশারিয়া নামে পরিচিত।
কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে আশারিয়া মতবাদ : মুতাজিলারা আল্লাহর গুণাবলি অস্বীকার করার মতই কুরআনের অনাদিত্ব ও নিত্যতাকে অস্বীকার করেন। তাদের মতে, কুরআন সৃষ্ট। কিন্তু আশারিয়ারা এ মতের বিরোধিতা করেন। তারা নিত্যতা বিশ্বাস করেন। তাদের মতে, কুরআন সৃষ্টি হয় নি; এটি চিরন্তন। প্রথম পর্যায়ে কুরআন লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। হযরত জিবরাইল (আ) এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক কুরআনকে মহানবী (স) এর কাছে পাঠান। তাই এর সাথে পার্থিব কোন সৃষ্ট বিষয়ের সম্পর্ক নেই।
কুরআনের চিরন্তন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে মুতাজিলারা বলেন যে, পাশ্চাত্যের কিছু ভাষা কুরআনে রয়েছে। তাই কুরআনকে যদি চিরন্তন বলা হয় তাহলে যেসব শব্দ তখন তৈরি হয় নি তা কুরআনে কিভাবে প্রবেশ করলো? আশারিয়া চিন্তাবাদগণ এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, তার কাছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব সমান। অনাদিকাল হতে অনন্তকাল পর্যন্ত তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞাতা অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীতে আরবের ভাষা কি হবে তা আল্লাহ্ জানতেন। আশারিয়ারা তাদের মতের সমর্থনে কতকগুলো আয়াত ব্যাখ্যা করেন, সেগুলো হলো :
১. পূর্বাপর সকল আদেশ আল্লাহর (সূরা-৩০, আয়াত-৪);
২. সৃষ্টি এবং আদেশ কি তার নয় (সূরা-৭, আয়াত-৫৪); আল্লাহ্ বলেছেন, একটা বস্তুর প্রতি আমাদের শব্দ হচ্ছে ‘হও’ যখন একে হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। এ ‘হও’ শব্দটি বলার সাথে সাথে বস্তুটি হয়ে যায়। আশারিয়ারা যুক্তি দেন যে, যদি কুরআন সৃষ্ট বলে ধরে নেয়া হয়, তবে কুরআনের অস্তিত্বের পূর্বে ‘হও’ শব্দটি উচ্চারিত হয়েছিল। আল্লাহ যদি কুরআন সৃষ্টির জন্য ‘হও’ শব্দ বলেন যা আল্লাহর বাণী, তবে কুরআনের এ ‘হও’ শব্দ সৃষ্টির জন্য আরো একটি শব্দ সৃষ্টি হয়েছিল। এভাবে যুক্তি দিয়ে কুরআন সৃষ্ট নয়, চিরন্তন বলে আশারিয়ারা প্রমাণ করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে আশারিয়ারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুতাজিলাদের মতের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবুও কুরআনের নিত্যতা সম্পর্কে আশারিয়াদের যে মতবাদ তা আমাদেরকে আল্লাহ্ এবং কুরআন সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।