ঐকতান’ কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের যে জয়গান গেয়েছেন তার পরিচয় দাও।

 

 ভূমিকাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তাঁর অন্তরের গভীর অনুভূতির প্রকাশ, যা তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি যখন তাঁর কাব্যকীর্তির মূল্যায়নে ব্রতী হন, তখন তাঁর দুর্বল দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই কবিতায় কবি তাঁর সৃষ্টির অসম্পূর্ণতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা এবং তাদের জীবনযাত্রার প্রতি অজ্ঞতার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন। কবি উপলব্ধি করেন যে, তাঁর কাব্যের মধ্যে কোথাও যেন একটি অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে, যা তিনি নিজেও অস্বীকার করতে পারেন না। ‘ঐকতান’ কবিতায় এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতিফলন ঘটেছে, যা পাঠকদের মর্মস্পর্শী করে তোলে।

 কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের যে জয়গান গেয়েছেন: ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তাঁর অন্তরের পরিচয়সমৃদ্ধ অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। কবির মৃত্যুর বছরই ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থে এটি প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি যখন তাঁর কাব্যকীর্তির মূল্যায়নে ব্রতী হলেন, তখনই তাঁর দুর্বল দিকগুলো প্রকাশ পেল। এই কবিতায় কবি সমগ্র জনগোষ্ঠীর জয়গান গেয়েছেন এবং তাঁদের অনুপস্থিতি তাঁর মনে গভীর দুঃখের সঞ্চার করেছে। কবি উপলব্ধি করেন যে, তাঁর কাব্যের মধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি যথেষ্ট পরিমাণে ধরা পড়েনি। এই অসম্পূর্ণতা ও অনুভূতির প্রতিফলন ‘ঐকতান’ কবিতায় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যা পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি সাধারণ মানুষের প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। এই কবিতায় কবি নিম্নলিখিত শ্রেণীর মানুষের জয়গান গেয়েছেন:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তাঁর অন্তরের গভীর অনুভূতি ও সমাজের প্রতি ভালোবাসার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। এই কবিতাটি ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর বছরেই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি যখন তাঁর রচনাগুলির মূল্যায়ন করতে বসেন, তখন তিনি উপলব্ধি করেন যে, তাঁর কাব্যে সাধারণ মানুষের প্রতিচ্ছবি পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি।

কবিতায় বিভিন্ন পেশার মানুষের জয়গান: 

কৃষক: কবি কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম, শক্তি, সাহস ও ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন, যারা আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে।

শ্রমিক: কলকারখানার শ্রমিকদের পরিশ্রম ও ত্যাগের জন্য কবি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, কারণ তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।

জেলে: নদী-সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করেন জেলেরা। কবি তাঁদের সাহস ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাত্রার জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

তাঁতি: তাঁতিরা সুতো কেটে কাপড় তৈরি করে। কবি তাঁদের দক্ষতা ও শিল্পবোধের প্রশংসা করেছেন।

কামার: লোহার কাজ করে বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করেন কামাররা। তাঁদের শক্তি ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন কবি।

অন্যান্য পেশাজীবী: শিক্ষক, ডাক্তার, কারিগর, ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরও কবি তাঁর কাব্যে সন্মানিত করেছেন।

কবির বার্তা: কবি মনে করেন, সাধারণ মানুষেরাই সমাজের মেরুদণ্ড। তাঁদের পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমেই সমাজ ও দেশের অগ্রগতি সম্ভব। তিনি সকলকে সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

কাব্যের অসম্পূর্ণতা ও সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা: কবি স্বীকার করেন যে, উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণের কারণে তিনি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার স্পর্শ পাননি, ফলে তাঁর কাব্যে তাঁদের পর্যাপ্ত প্রতিফলন ঘটেনি। এজন্য তিনি অনুতপ্ত।

সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তাঁদের জীবনযাত্রার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নবীন কবিদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তাঁরা সাধারণ মানুষের জীবনকে তাঁদের সৃষ্টিতে তুলে ধরেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয়: কবি তাঁর ভুল স্বীকার করার সাহস দেখিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। এছাড়াও, নবীন কবিদের নতুন দিক উন্মোচনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এইভাবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তাঁর কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হয়ে উঠেছে, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে।