এই সড়ক তাহাদের সে কামনাকে পরিপূর্ণ করিতে পারিবে কি না তাহা বিচারের সাধ্য তাহাদের ছিল না, বিশ্বাসেই তাহারা উজ্জীবিত হইয়া উঠিয়াছে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম রচিত ‘পথ জানা নাই’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : মাউতলাবাসী জোনাবালি হাওলাদার প্রস্তাবিত নতুন সড়কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : মাউলতলা ছিল গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি নিস্তরঙ্গ জনপদ। বাইরের দুনিয়া বিশেষ করে নাগরিক সভ্যতার স্পর্শ থেকে গ্রামটি ছিল বিচ্ছিন্ন। এই গ্রামেরই জোনাবালি হাওলাদার চল্লিশ বছর বাইরে থাকার পর গ্রামে ফিরে এসে গ্রামবাসীকে নতুন জীবনের কথা শোনাল। শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা গেলে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের পথ খুলে যাবে বলে সে সকলকে স্বপ্ন দেখালো। গ্রামবাসী তার কথায় চমৎকৃত হয়ে তার পরামর্শ বিবেচনায় নিল। জোনাবালি শহরে যাতায়াতের জন্য নতুন সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করল। এই সড়কের জন্য জমির প্রয়োজন। গহুরালির পাঁচ কুড়া জমির দুই কুড়াই সড়কের আওতায় পড়ল। প্রথমত গহুরালি ইতস্তত করলেও নতুন জীবনের আশায় জোনাবালির প্রস্তাবে রাজি হলো। স্ত্রী হাজেরাকেও সে সাধ্যমতো বুঝালো। সড়ক ঘিরে গ্রামের সমস্ত মানুষ গহুরালির মতোই নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হলো। এই সড়ক তাদের কামনা বাসনাকে পূর্ণ করতে পারবে কি না তা বিচারের ক্ষমতা তাদের না থাকলেও প্রবল বিশ্বাসে তারা উজ্জীবিত হয়ে উঠল। নতুন সড়ক তাদের নতুন জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখা দিল।
মন্তব্য: মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। মাউলতলার মানুষও নতুন সড়ককে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হলো।