উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্ম হয়। জাতিসংঘের কার্যক্রম
পরিচালনার জন্য বেশ কিছু সংস্থা কাজ করে। UNFPA তেমনি জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬৯ সাল থেকে কর্মরত এই সংস্থা উন্নয়নশীল ও উত্তরণমুখী দেশগুলোতে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সম্পদ সহায়তা দানকারী বৃহত্তম সংস্থা। মাতৃমৃত্যু হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য, অসুস্থতা, শিশু মৃত্যু হ্রাস, অবাঞ্ছিত গর্বধারণ কমানো, জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার মাধ্যমে UNFPA বাংলাদেশে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
UNFPA -এর পরিচয় : UNFPA জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে United Cations Fund for population Activites -সংক্ষেপে “UNFPA” এটা জাতিসংঘ জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে জনসংখ্যা কার্যক্রমে কার্যকরী সহায়তা দানের উদ্দেশ্যেই এ তহবিল গঠন
করা হয়। ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জনসংখ্যা কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে একটিপ্রস্তাবনা রা হয়। সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রথমে ট্রাস্ট ফান্ড Trust Fun (TF) নামে একটি তহবিল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে এর নাম পরিবর্তন করে United Nations Fund For Population Activities
সংক্ষেপে UNFPA ‘জাতিসংঘ জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল’। একটি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের
অধীনে একটি বিশেষায়িত সংস্থার মর্যাদা দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের (USA) নিউইয়র্ক শহরে UNFPA-এর সদর দপ্তর অবস্থিত। বাংলাদেশে UNFPA -এর কার্যক্রম ঃ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে UNFPA -এর কার্যক্রম শুরু হয়।
মাতৃস্বাস্থ্য,অসুস্থতা জন্মবিরতির কল্যাণ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি কাজে জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশে UNEPA যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সেগুলো প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো :
১. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ঃ পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির মাধ্যমে UNFPA বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। মাতৃসদন বা প্রসব ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা, পরামর্শ এবং উর্বরতা নিয়ন্ত্রণ কৌশল নির্ধারণে UNFPA ব্যাপক সহায়তা দান করে। জনসাধারণের পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রয়োজন মেটাতে
UNFPA সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও NGO-দের কাজ করে যাচ্ছে।
২. প্রজনন স্বাস্থ্য কর্মসূচি : UNFPA বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। UNFPA-র স্থানীয় কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অবদান রাখা এবং এর মাধ্যমে টেকসই সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের পথে এগিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যার্জনে সপ্তম বাংলাদেশ স্থানীয় কর্মসূচি ২০০৬-
২০১০ এ কৌশলগত লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্ম, জেন্ডার ন্যায়্যতা ও সমতা এবং দারিদ্র্য হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপসহ মাতৃত্ব ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করা।
৩. যোগাযোগ কর্মসূচি ঃ UNFPA-র বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যোগাযোগ নীতি গ্রহণ করেছে; যাতে সকলে জনসংখ্যা বিষয়ে জানে এবং সচেতন হয়। ফলে তারা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই এক্ষেত্রে মূল কর্মসূচি।
৪. শিক্ষা কর্মসূচি ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে জনসংখ্যা বিষয়ক শিক্ষাদান দিয়ে জনগণকে জনসংখ্যা
বিষয়ে সচেতন করে, ফলে তারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
৫. জনসংখ্যা গতি নির্ধারক ও বাংলাদেশে জনসংখ্যার গতি নির্ধারণেও কাজ করে চলছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল। এতে জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য, জনসংখ্যার ঝুঁকি ও ফলাফল নির্ধারণ এবং জনসংখ্যা ও আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের পারস্পরিক ক্র
িয়া-প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করা। যা জনসংখ্যা উন্নয়নে সঠিক কর্মকৌশল গ্রহণে সাহায্য করে।
৬. জনসংখ্যা নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ ঃ বিভিন্ন নীতির মূল্যায়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাথে জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে সমন্বয় সাধন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে শিক্ষা, সচেতনতা ও ক্লিনিক্যাল সেবা সম্পর্কিত কর্মশালার আয়োজন করে।
৭. জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন ঃ পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বাইরেও রয়েছে জনসংখ্যা বিজ্ঞান বা জনবিজ্ঞান বিষয়ক কার্যাবলিকে গতিশীলতা প্রদানমূলক কার্যাবলি। এসব কার্যাবলি হলো বিভিন্ন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিষ্ঠানে অনুদান বৃদ্ধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দান।
৮. প্রশিক্ষণ ও প্রকল্প পরিচালনা : UNFPA এর কার্মসূচির মধ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রকল্প পরিচালনা কর্মসূচি অন্যতম। পরিবার পরিকল্পনা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও শূন্য জনসংখ্যা প্রকল্প পরিচালনা করা।
৯. বিশেষ কর্মসূচি ঃ মহিলা, শিশু, তরুণ, বয়স্ক ব্যক্তি, দরিদ্র, সুস্থ-অসহায় ও অসুবিধাগ্রস্ত শ্রেণির জন্য বিশেষ সাহায্য দান এবং লৈঙ্গিক সমতা বিধান কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
১০. বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা : UNFPA -এর উদ্যোগে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে কম বয়সে মাতৃত্ব বোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রদান ও HIV/AIDS প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১১. জরিপ ও গবেষণা ঃ জনসংখ্যা বিষয়ে মৌলিক তথ্য ও পরিসংখ্যান সরবরাহের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে UNFPA-1 এর মধ্যে রয়েছে লোক গণনা, আবশ্যকীয় পরিসংখ্যান, নিবন্ধন ও মৌলিক গবেষণা।
১২. উপকরণ সরবরাহ ঃ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে UNFPA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৩. বিবিধ কর্মসূচি ঃ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সেমিনার, সম্মেলন, তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা, আন্তঃবিভাগীয় শৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, জনবিজ্ঞান সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রভৃতির মাধ্যমে জনসংখ্যার চিত্র তুলে ধরা।
উপসংহার। পরিশেষে বলা যায় যে, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলায় UNFPA -এর ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিটি নারী, পুরুষ ও শিশু একটি সুস্থ জীবন ও সমান সুযোগ উপভোগের অধিকার প্রতিষ্ঠায় UNFPA ব্যাপক কাজ করে। দরিদ্র হ্রাসের জন্য প্রতিটি গর্ভধারণ যাতে প্রত্যাশিত হয়, প্রতিটি জন্ম যাতে নিরাপদ হয়, প্রতিটি
তরুণ যাতে HIV/AIDS থেকে মুক্ত থাকে সেক্ষেত্রে UNFPA -এর ভূমিকা বাংলাদেশে অপরিসীম।