উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বিশ্বে উন্নয়নশীল ও উত্তরণমুখী দেশগুলোতে জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যা কাঠামো গঠন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করাই UNFPA এর প্রধান লক্ষ্য। সংস্থাটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ, মৃত্যু হার বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রজনন
স্বাস্থ্য রক্ষার জনসংখ্যা বিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং জনসংখ্যার গতি ও প্রবণতা নির্ধারণের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যা কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে।
→ UNFPA-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : জাতিসংঘ জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল UNFPA এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ
১. জনসংখ্যা বিষয়ক কার্যক্রমে কারিগরি, আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তা প্রদান।
২. বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ।
৩. বিশ্বব্যাপী মাতৃ মৃত্যুর হ্রাস করা।
৪. প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন।
৫. জনসংখ্যা শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়ন।
৬. জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা ও মৌলিক তথ্যাদি সংগ্রহ।
৭. জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টি।
৮. প্রকল্পসমূহের সমন্বয় সাধনে জাতিসংঘ ব্যবস্থার অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ।
→ বিশ্বব্যাপী UNFPA – এর অবদান : বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে UNFPA অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যে সকল ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এ বিশেষ সংস্থাটি সদস্য দেশ ও জাতিসমূহকে সাহায্য করে যাচ্ছে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ঃ তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ যেখানে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল, সম্পদের সীমাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা প্রবল সেসব দেশে বাড়তি জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতির উপর মারাত্মক নৈতিবাচক প্রভাব ফেলে, বিশ্ব সম্পদ ও পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। জাতিসংঘের এ বিশেষায়িত সংস্থা এ সকল দেশকে জনসংখ্যা বিষয়ক সুষ্ঠু নীতি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় সারে ৩০
কোটি দম্পতি পূর্ণমাত্রায় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আরও অতিরিক্ত ১২০০ লক্ষ নারী বর্তমানে পরিবারে পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতো, যদি আরও সঠিক তথ্য, সাধ্যের মধ্যে সেবা এবং যথাযথ পরামর্শের ব্যবস্থা থাকতো। জনসাধারণের পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রয়োজন মেটাতে
সরকারসমূহ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও NGO-দের সাথে কাজ করে যাছে।
২. নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য : বিশ্বজুড়ে নারী প্রজনন নিশ্চিতের লক্ষ্যে UNFPA কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দেশে উচ্চমৃত্যু রয়েছে সেসব দেশে প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে UNFPA বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা, যৌন স্বাস্থ্য ও নিরাপদ মাতৃত্ব যেগুলোর মাধ্যমে জনগণ তাদের
অভীষ্ট আকৃতির পরিবার গঠন ও জীবন পরিকল্পনার অধিকতর স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে এবং ধীরগতিতেও সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখে। প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে দম্পতিদের সন্তানের সংখ্যা এবং দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য সাধনে সামর্থ্য। UNFPA -এর ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারসমূহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও NGO -সমূহের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
৩. জনসংখ্যা ও উন্নয়ন কৌশল ঃ UNFPA মনে করে ভারসাম্যপূর্ণ জনসংখ্যা উন্
নয়নে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। তাছাড়া জনসংখ্যার আকার, আকৃতি ও প্রকৃতির সাথে দেেেশর উন্নয়নে রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক। UNFPA বিভিন্ন জাতিসমূহের উন্নয়ন কৌশল হিসেবে জনসংখ্যাকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতি। তাই সদস্য দেশসমূহে জনংসংখ্যা সম্পর্কিত নীতিমালা গ্রহণে সহায়তা করে। তাছাড়া তারেদ জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের কৌশল প্রণয়নে ও জনসংখ্যা কর্মসূচির জন্য নিজস্ব সামর্থ্য তৈরিতে সাহায্য করে থাকে
৪..লৈঙ্গিক সমতা বিধান ঃ UNFPA মনে করে জাতিসমূহের উন্নয়নে লৈঙ্গিক সমতা বিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই এক্ষেত্রেও সংস্কৃতি দেশসমূহের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। এক্ষেত্রে নারীর সমতা রাজনৈতিক, অঙ্গীকার রক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা ও উন্নয়নের জন্য সম্পদের বিকাশের উপর গুরুত্ব প্রদান
করা হয়। আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলন ১৯৯৪ (কায়রো) এ গৃহীত প্রায়োগিক কর্মসূচির অগ্রগতি সাধনে UNPA নেতৃত্ব প্রদান করে । এ কর্মসূচিতে জনসংখ্যাগত লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে ব্যক্তি নারী ও পুরুষের প্রয়োজন
মেটানোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। এর নিয়মিত দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও চাকরির অধিকতর সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের পছন্দের ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করা।
৫. তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রয়োজন মেটানো ঃ এছাড়াও UNFPA তরুণদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কর্মসূচির মধ্যে হলো কম বয়সে মাতৃত্ববোধ, গর্ভপাতের হার হ্রাস, এইচ আইভি/এইডস ও যৌন বাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও তথ্যে প্রবেশাধিকারের উন্নতি সাধনে প্রয়াসী।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, UNFPA বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ পদ্ধতি সম্প্রসারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই UNFPA বিশ্বে সকল জনসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সাফলের স্বাস্থ্য বিষয়ে নায্য অধিকার
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রভৃতি বিষয়ব্যাপক অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। UNFPA।বিশ্বব্যাপী দিন দিন তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করে চলছে।