উত্তর : ভূমিকা ঃ মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তির ও নৈতিক সংহতির উপর ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালের ৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে UNESCO। UNESCO বাংলাদেশে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে থাকে। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
→ UNESCO-র সাংগঠনিক কাঠামো ঃ ইউনেস্কোর সাংগঠনিক কাঠামো ৩টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। যথা :
১. সাধারণ সম্মেলন : UNESCO’র সাধারণ সম্মেলন পরিচালনা সংস্থা নামেও পরিচিত। সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে এটি গঠিত। প্রতিবছর এক বার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি সদস্য ৫ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে
পারে; তবে ভোট একটি। মূল কর্মসূচি নির্ধারণ, প্রতিবেদন প্রস্তুত, আলোচনা কার্য-নির্বাহী পর্ষদের সদস্য নির্বাচন ও মহাপরিচালক নিয়োগ এর প্রধান কাজ।
২. কার্য নির্বাহী পর্যদ ঃ সাধারণত সম্মেলন কর্তৃক নির্বাচিত ২৪ জন সদস্য নিয়ে এটি গঠিত হয়। এর সভা বছরে অন্তত দু’বার অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে সাধারণ সম্মেলনের প্রস্তাব কার্যকরীকরণ, বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান, মহাপরিচালক নিয়োগ, মহাপরিচালকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, নতুন সদস্য গ্রহণের সুপারিশ পেশ প্রভৃতি।
৩. সচিবালয় ঃ মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়ে এটি গঠিত, যা কার্যনির্বাহী পর্ষদের ও সংস্থার কাজকর্ম পরিচালনা করে।
UNESCO-র কার্যক্রম ঃ বাংলাদেশ UNESCO -র ঢাকা অফিসের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে। বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো ঃ
১. শিক্ষাক্ষেত্রে ঃ প্রাথমিক সাক্ষরতা ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষাসহ মৌলিক *শিক্ষা, একীভূত শিক্ষা ও বহুমুখী বিতরণ পদ্ধতি, গুণগত শিক্ষা ও নবায়ন শিক্ষা পদ্ধতি; এইচআইভি/এইডস সচেতনতা ও নিবারণ শিক্ষা। সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়ন UNESCO আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি প্রাক- শৈশবকালীন যত্ন ও শিক্ষা, আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা, কমিউনিটি রিসার্স সেন্টারের মাধ্যমে মৌলিক শিক্ষায় ICT এর ব্যবহার, ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম HIV/AIDS প্রতিবোধ শিক্ষা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা নীতি সংস্কার,
শিক্ষক প্রশিক্ষণের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা গবেষক ফোরামে মাধ্যমে শিক্ষা গবেষণার সহায়তা প্রদান করে।
২. বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ঃ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহের বিকাশ ও উন্নয়নে ইউনেস্কোর ভূমিকা অপরিসীম। এ সংস্থা ভূ- বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জলবিজ্ঞান, সমুদ্রবিদ্যা, গণিত, জীববিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ, আন্তঃসম্পর্ক প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন- অনুজীববিজ্ঞান কর্মশালা ও কেন্দ্র।
৩. সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ঃ প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার স্থানসমূহ সংরক্ষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সুরক্ষা ক্ল্যাসিক্যাল ও ঐতিহ্যবাহী লোক সংগীতের শৈল্পিক সৃজনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের নিরাপদ সুরক্ষা।
৪. যোগাযোগ তথ্যক্ষেত্রে ঃ মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাহুত্ববাদের উৎকর্ষ সাধন যোগাযোগের মাধ্যমের উন্নয়নে সহায়তা দান। উন্নত তথ্য মাধ্যমে বাংলাদেশের নৃ-বিজ্ঞানের অনুশীলন হয়।
৫. বহুমুখী বিষয়বস্তু ক্ষেত্রে ঃ শিক্ষা, বিজ্ঞান, যোগাযোগ ও তথ্যের মাধ্যমে তরুণ মহিলাদের দারিদ্র্য চক্র দূর করা। যা বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখছে। ইউনেস্কো বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কম্পিউটার সরবরাহ করে থাকে।
৬. প্রশিক্ষণ ঃ তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানসম্মত কাঠামো সৃষ্টিতে চেষ্টা করে; যা উন্নয়নের সহায়ক। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবসম্পদ উন্নয়নে এবং কম্পিউটার শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। গর্ত ২০০৭ সালে সমাজসেবা একাডেমিতে
তিন মাসব্যাপী সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পাদন হয়।
৭. গবেষণা ক্ষেত্রে ঃ এদেশে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে করণীয় দিকগুলো উন্নয়নে গবেষণাকার্য পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং শিক্ষা সম্পর্কে পর্যাপ্ত উন্নতি প্রয়োজন । ইউনেস্কো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে প্রয়োজীয় উপকরণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। যা উন্নয়নের পথনির্দেশনা দান করে।
৮. পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ঃ ইউনেস্কো বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হলো দেশের যে সমস্ত পুরাকীর্তি রয়েছে তা সংরক্ষণে অর্থ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা। কুমিল্লার ময়নামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, ঢাকার আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হল এবং সোনারগাঁও -এর ঈসা খার প্রাসাদ।
৯. প্রকাশনা ক্ষেত্রে ঃ মৌলিক শিক্ষা, গবেষণা শিক্ষা সাময়িকী, ইএফ এ বিশ্ব নজরদারি প্রতিবেদন, শিল্পকলার ইতিহাসে, তথ্য কেন্দ্র খোলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইউনেস্কো কাজ করছে।
১০. শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ ও শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহে ইউনেস্কো বাংলাদেশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। শিক্ষা বিস্তারের জন্য বই সরবরাহ, ফটোস্ট্যাট যন্ত্র ক্রয়, লাইব্রেরীর অবকাঠামো উন্নয়ন, স্কুল ও কলেজের বিল্ডিং ও ফার্নিচার ক্রয়ে ইউনেস্কো বাংলাদেশে সহায়তা দান করে। যাতে শিক্ষা কার্যক্রম অভীষ্ট লক্ষ্যে
পৌঁছাতে পারে ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ইউনেস্কো জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছে। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিক্ষা ফোরামের কার্যক্রমের রূপরেখার ভিত্তিতে গৃহীত জাতিসংঘের এযাবৎ কালের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিযান ২০১৫ সালের মধ্যে সার্বজনীন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন এর দায়িত্ব পালন করেছে UNESCO। যা বাংলাদেশের উন্নয়নের এক বিরাট পথ প্রদর্শন।