FAO -এর প্রশাসনিক কাঠামো কেমন? বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণে FAO -এর ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বিশ্বব্যাপী পুষ্টির মাত্রা
বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নয়ন, সক্রিয় ও সুস্থ জীবনের জন্য সকল সময়ে সকল মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা অর্জন এবং খাদ্য ও কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় FAO। এর রয়েছে নির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠমো যার উপর ভিত্তি করেই বিশ্বব্যাপী তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রশাসনিক কার্যক্রম শক্তিশালী হওয়ায় FAO বর্তমান বিশ্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। FAO এর যে সকল ভূমিকা বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণে ব্যাপৃত সে সকল ভূমিকাগুলো নিম্নে প্রতীয়মান হলো ঃ
→FAO -র প্রশাসনিক কাঠামো ঃ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো থাকে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ও তার ব্যতিক্রম নয়। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর প্রশাসনিক কাঠামো ৩টি অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত নিম্নে সে
প্রশাসনিক কাঠামো আলোচনা করা হলো-
১. সাধারণ সম্মেলন ঃ এটি FAO-এর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, যার সম্মেলন দু’বছরে ১ বার অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রতি সদস্য রাষ্ট্রের ১টি ভোট থাকে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এ সংস্থা পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাজেট অনুমোদন, সুপারিশ প্রদান প্রভৃতি কাজ করে থাকে।
২. পরিষদ : সাধারণ সম্মেলন কর্তৃক ৩ বছরের জন্য ৪৯ জন সদস্য সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠিত। যা সম্মেলনের কার্যাবলি সম্পাদন করে। কার্যনির্বাহী এ পরিষদে বছরে দু’বার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এর আবার উপকমিটি আছে। যথা-
(ক) কর্মসূচি বিষয়ক কমিটি;
(খ) অর্থবিষয়ক কমিটি;
(গ) ‘সাংবিধানিক আইনবিষয়ক কমিটি;
(ঘ) মৎস্যবিষয়ক কমিটি;
(ঙ) বনায়নবিষয়ক কমিটি;
(চ) কৃষিবিষয়ক কমিটি এবং
(ছ) বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি।
৩. সচিবালয় ঃ FAO এর কর্মসূচি বাস্তবায়নে সচিবালয় নিয়োজিত। এর প্রধান হচ্ছেন মহাপরিচালক । যিনি পরিষদ কর্তৃক ৬ বছরের জন্য নিযুক্ত হন।
→ বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণে FAO এর ভূমিকা ঃ FAO এর প্রথম অঙ্গীকার হল ‘ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’ গঠনের উদ্দেশ্যে ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই FAO বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও সমাজকল্যাণে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে। নিম্নে FAO এর সে সকল ভূমিকাগুলো আলোচনা করা হলো :
১. খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব সৃষ্টিতে ঃ FAO আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে মনিটর মূল্যায়ন ও আলোচনা করার জন্য বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা কমিটি গঠন করেছে। এটি কমিটি খাদ্য চাহিদা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে এর প্রাপ্যতা ও মজুদের স্তর মূল্যায়ন করে এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে গৃহীত নীতিমালা মনিটর করে। যা বর্তমানে প্রায় ৮৫টি দেশের মানুষের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ কর্মসূচির অধীনে
(ক) খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষি কাজে যুক্ত পরিবারগুলোর অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
(খ) পরীক্ষামূলক স্তরে কৃষকরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তি বাছাই ও প্রদর্শন ।
(গ) সম্প্রসারণ পর্যায়ে সকল কৌশল উদ্ভাবন করা হয়।
২. কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন : জাতিসংঘের পল্লি উন্নয়নে মূল সংস্থা হিসেবে FAO গুরুত্ব অবদান রেখে চলছে। সদস্যসমূহকে কৃষি, বন, মৎস্যসহ পল্লি উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে FAO সহায়তা করে চলছে সূচনা লগ্ন থেকেই। FAO –
এর পল্লি উন্নয়নের সাফল্যের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা CIRDAP -এর কথা বলতে পারি। এটি উন্নয়নশীল দেশসমূহে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধি, পল্লি উন্নয়নে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও পল্লির সম্পদ সদ্ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
৩. টেকসই কৃষি উন্নয়ন ঃ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ বদান হলো টেকসই কৃষি উন্নয়ন। পৃথিবীর | বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ লোকের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হলো কৃষি। শহরায়নের ফলে গ্রামীণ কৃষিতে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা দিন দিন গ্রামগুলোকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। FAO এর দারিদ্র্যতার হাত থেকে টেকসই কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রদান করে থাকে। যা টেকসই কৃষি উন্নয়ন বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৪. মৎস্য ও জলজ সম্পদ উন্নয়ন : FAO -এর সদস্য দেশগুলোকে মৎস্য ও জলজ সম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন সাধনে সক্ষম হয়েছে। আফ্রিকার ৯টি দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশের কর্মসূচিতে FAO মৎস খামারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে তাদের জীবনযাত্রার মান ও পুষ্টি উন্নয়নে সহায়তা করে। যা ক্ষুদ্র চাষিদের
নিজেদের জীবিকা ও বাণিজ্যের জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করছে।
৫. বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ঃ সারা বিশ্বে পরিবেশ বিপর্যয় এবং বনভূমিকা ক্রমশ উজাড় হয়ে যাওয়া রোধকল্পে FAO বনভূমির ক্রমশ উজাড় হয়ে যাওয়া রোধকল্পে FAO সদস্য দেশগুলোকে বিভিন্ন প্রকল্প সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বনভূমি বৃদ্ধিতে সাহায্য সহায়তা করে এবং বন সংরক্ষণে উৎসাহ প্রদান করে।
৬. নারী উন্নয়ন ঃ কৃষিকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে দরিদ্র নারীদের উন্নয়নে কৃষির কৌশলকে ব্যবহার করছে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। মালিতে ঘূর্ণায়মান তহবিল গঠনের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে যা দিয়ে মহিলা
গোষ্ঠীগুলো বীজ, সার, পানির পাম্প ও শস্য ভাঙ্গার কল কিনতে পারে। পল্লির নারীরা এভাবে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধি করছে। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে FAO -এর সকল ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৭. কৃষির আধুনিকীকরণ ঃ কৃষির আধুনিকীকরণে FAO বিশেষ ভূমিকা পালন করে পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে সার, উন্নত বীজ সরবরাহ, উন্নত কৃষি উপকরণ, সেচ যন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষি আধুনিকীকরণে FAO অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে।
৮. দরিদ্র কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে : FAO বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের মধ্যে গ্রামীণ দরিদ্র চাষিদের আয়বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে FAO দরিদ্র কৃষকদের মাঝে আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার বা ক্ষুদ্র আকারে প্রক্রিয়াজাতকরণে উৎসাহিত করে। সম্পদ সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কিভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায় সে বিষয়ে ক্ষুদ্র চাষিদের শিক্ষা দেয়। যেমন- এক সঙ্গে
বেশি পরিমাণ সার ক্রয় বা লক্ষ্যের এক সঙ্গে বাজারজাতকরণ করা ইত্যাদি।
৯. কীট-ব্যবস্থাপনা ঃ FAO -এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কীট-ব্যবস্থাপনা সহায়তা দানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। FAO উদ্ভাবিত সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনা কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার চাষিরা তাদের ধানের ফলন বাড়িয়েছে এবং ক্ষতিকারণ কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে সহায়তা করেছে। এভাবে FAO -এর সহযোগিতায় তারা পরিবেশ ও খাদ্যমান রক্ষা করছে এবং কীটনাশক ভর্তুকি হিসেবে সরকারের বিরাট খরচ বাঁচিয়েছে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জাতিসংঘের শত ব্যস্ততার মাধ্যমে FAO বিশ্বে গ্রামীণ উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পল্লি অঞ্চলের জনসংখ্যার দরিদ্রতম অংশের খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। FAO প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও সমাজকল্যাণ উন্নয়নে স্বার্থে কৃষি উন্নয়নের বিকাশে উন্নতর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার সন্ধানে দরিদ্র ও ক্ষুদ্র দূরীকরণে কাজ করছে।