অথবা,CEDAW এর ধারা সংরক্ষণ রুতটুকু যুক্তিসংগত?
অথবা, নারীর সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সরকারের CEDAW এর ধারাগুলো
সংরক্ষণ কতটুকু যৌক্তিক? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, CEDAW এর ধারা সংরক্ষণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : CEDAW এর কতিপয় ধারা ও উপধারা অনুমোদন না করার পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা হলো বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। তাই মুসলিম ধর্মের বিধানসমূহকে এ সংরক্ষণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এ ধারাগুলো পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে গড়ে
উঠা শরীয়া আইনের পরিপন্থী হওয়ায় সংরক্ষণ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকারের বিবেচনায় এ সংরক্ষণ নৈতিকতা বিবর্জিত । কারণ-
১. সংবিধান লংঘন করা : সরকার ২নং ধারা সংরক্ষণের মাধ্যমে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো নতুন আইন প্রণয়ন, পুরাতন আইনের সংস্কার ও সংশোধনের বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করে দিচ্ছে। কাজেই, সরকার ধারা-২ এর অস্বীকৃতি জানিয়ে নারীকে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
২. মৌলিক অধিকার লংঘন : CEDAW সনদের ধারা ১৩ (ক), ১৬.১ (গ) ও চ এর সংরক্ষণ বাংলাদেশ সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ নং ধারায় বর্ণিত নারী পুরুষের সমান অধিকারের ঘোষণার পরিপন্থী। অর্থাৎ এখানে
নারীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।মাগুলো সংরক্ষণ কী যুক্তিযুক্ত তোমার মতামত দাও।
৩. সম্পূরক ধারা : CEDAW এর কোনো বিশেষ ধারার সংরক্ষণ অন্য ধারার অনুমোদনকে অর্থহীন করে তোলে।কারণ এ ধারাগুলো একে অপরের সম্পূরক ও পরিপূরক।
৪. অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ : ইরাক, ইয়ামেন, তিউনিশিয়া, মিশরের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে এসব ধারার সম্মতি দিয়েছে এবং এসব দেশে শরীয়া আইন অনুসারিত হচ্ছে। তাহলে কেন বাংলাদেশ সরকার শরীয়া আইনের নামে তা সংরক্ষণ করবে?
- Platform For Action : বেইজিং ঘোষণা (৯৫) এর PFA পূর্ণ অনুমোদনের পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ধারাগুলোর উপর সংরক্ষণ বজায় রাখার আর কোন যৌক্তিকতা নেই।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার থেকে বলা যায় যে, CEDAW সনদ হলো বিশ্বব্যাপী অবহেলিত ও পশ্চাদপদ নারী সমাজের উন্নয়নে একটি আন্তর্জাতিক প্রয়াস। এ সনদের মূল লক্ষ্য হলো নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করা। অথচ সরকা এ সনদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন না দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসন ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কাছে মাথা নত করছে।