অথবা, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ সম্পর্কে Juliet Mitchell এর মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, Juliet Mitchell এর সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, Juliet Mitchell সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ সম্পর্কে কী ধারণা দিয়েছেন লিখ।
অথবা, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ সম্পর্কে জুলিয়েট মিশেল এর মতামত উল্লেখ কর।
অথবা, জুলিয়েট মিশেলের সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ তত্ত্বটি সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : মার্কসীয় নারীবাদের সমালোচনায় সমাজতান্ত্রিক নারীবাদের উদ্ভব ঘটে। ধনতান্ত্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) উভয় রাষ্ট্রেই নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও প্রজনন স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে খুবই নিচু অগ্রগণ্যতা লাভ করেছে। সমাজতান্ত্রিক নারীবাদীরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, কেবল ধনিকতন্ত্র নারী নির্যাতনের একক কারণ নয়। তাঁদের মতে, ধনিকতন্ত্রের সাথে পিতৃতন্ত্রের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী। পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ নির্মূল না করলে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক নির্মূল করা যাবে না। নারীর ভবিতব্য এই যে, তাকে দু’রণাঙ্গনে লড়াই করতে হবে, ধনিকতন্ত্র এবং পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এছাড়া নির্যাতনের শক্তিগুলো থেকে মুক্তি লাভের অন্য কোনো উপায় নেই। সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ প্রসঙ্গে Juliet Mitchell এর অভিমত : জুলিয়েট ধনিকতন্ত্রের জড় অর্থনৈতিক বিবরণের পাশাপাশি পিতৃতন্ত্রের অজড় মতাদর্শিক বিবরণ দিয়ে বলেছেন যে, শ্রেণি সমাজ ধ্বংসের লক্ষ্যে মার্কসীয় বিপ্লব সংঘটনের সাথে সাথে সেক্স বা জেন্ডার ব্যবস্থা অর্থাৎ, পিতৃতন্ত্র ধ্বংসের লক্ষ্যে নারীবাদী বিপ্লব সংগঠন করতে হবে। ধনিকতন্ত্র নারী উৎপাদী শ্রমশক্তির অংশ এবং নারীর বর্তমান অবস্থার একমাত্র নিয়ামক বলে জুলিয়েট স্বীকার করেন না। এ প্রসঙ্গে Juliet Mitchell তাঁর ‘Women’s Estate’ গ্রন্থে বলেছেন, “The error of the old Marxist was to see the other three elements as reduciable to the economic hence the call for the entry into production was accompanied by the purely abstract slogan of the abolition of the family. Economic demands are still primary, but must be accompanied by coherent policies for the other three elements.” , সনাতন মার্কসবাদীরা ভুল করেছেন যে, অন্য তিনটি উপাদানকে অর্থনৈতিক উপাদানে পরিণত করা যায়। ফলে তারা নারীকে উৎপাদনে অংশগ্রহণে আহ্বান এবং একই সাথে পরিবার বিলোপ সাধনের বিমূর্ত শ্লোগান দিয়েছেন। অর্থনৈতিক চাহিদা এখনো মুখ্য বটে, কিন্তু সেই সাথে অন্য তিনটি উপাদান সঙ্গতিপূর্ণ নীতি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ সম্পর্কে Juliet Mitchell এর ধারণার বিভিন্ন দিকগুলো হলো :
১. নারী সম্পর্কে ধারণা : নারীকে শ্রমিক বা শ্রমজীবী হিসেবে নয়, প্রেমিক, স্ত্রী ও মাতা হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শ এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতি উভয়ই সমাজে নারীর বর্তমান অবস্থানের জন্য সমান দায়ী। এমন কি মার্কসবাদী বিপ্লব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারকে ধ্বংস করতে যদি সক্ষম হয় তবুও নারী পুরুষের সমান হবে না। কারণ পিতৃতন্ত্র নারী ও পুরুষের মনমানসিকতা (Psyche) এমনভাবে গড়ে তুলেছে যে, নারী নিজেকে পুরুষের অধীন ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। নারী পুরুষের সমান নয়, এ মনমানসিকতা যতক্ষণ না নারী ও পুরুষের মন থেকে মুছে ফেলা হবে ততক্ষণ এ ধারণা বিরাজমান থাকবে।
২. নারী সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন : পুরুষ অধীনতার মনমানসিকতা থেকে যতক্ষণ না নারী ও পুরুষ মুক্তিলাভ করবে, ততক্ষণ নারীমুক্তি আসবে না। পরিবার ভাঙলে বা পুঁজিবাদ বিনষ্ট হলেও নারীর অধীনতা থাকবে। কাজেই পিতৃতন্ত্র ও তার মতাদর্শ নির্মূল না হলে নারীর অবস্থার পরিবর্তন অসম্ভব। এককভাবে পুঁজিবাদ বা এককভাবে পিতৃতন্ত্র ধ্বংস করে নারীমুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। ধনিকতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্র উভয়ের ধ্বংসাবশেষের উপর নারীমুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩. নারীনির্যাতন সম্পর্কে
মনমানস : জুলিয়েটের দৃঢ় বিশ্বাস যে, নারীনির্যাতন মানুষের মনমানসের গভীরে মূলীভূত উদারপন্থী নারীবাদ, রেডিক্যাল নারীবাদ বা মার্কসীয় নারীবাদ কেউ এ নির্যাতনের সঠিক সমাধান দিতে পারে নি সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে নারীর ভোটাধিকার, সহশিক্ষার বিস্তার বা সদর্থক কর্মপন্থা নারীকে পুরুষের সমান করতে পারবে না, নারী ও পুরুষে সমতা স্থাপন করতে পারবে না। নারীর জন্য সকল পেশা ও অর্থকরী কর্মের দ্বার উন্মুক্ত করে দিলে ‘নারীত্বের অভিব্যক্তি’ বদলাতে পারে, কিন্তু নারীর অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটবে না।
৪. পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত : জুলিয়েট ভবিষ্যদ্বাণী করেন, পুরুষ ও নারীর মনমানস পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে কখনো পরিবর্তন আসবে না। নারীমুক্তির মাধ্যমে সমাজে মনুষ্যত্বের জয় ঘোষণা করতে হলে ধনিকতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্র উভয়ের বিনাশ অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে Mitchell তাঁর ‘Psychoanalysis and Feminism’ গ্রন্থে বলেছেন, “Despite collective work, egalitarian legislation, social care of children etc. it was too soon for the chinese really, deeply and irrevocably to have changed their attitude towards
women.” অর্থাৎ, যৌথ কর্ম সমতাপূর্ণ আইন প্রণয়ন, সমাজ কর্তৃক সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদি পদক্ষেপ সত্ত্বেও নারীর প্রতি চীনা জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে গভীরভাবে এবং চিরতরে পরিবর্তিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বিশ্বের উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশে নারী সমস্যার সমাধান হয়নি সত্য তবে সমাজতান্ত্রিক দেশেও এর সমস্যা প্রকট। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো ঘরে ও বাইরে উভয় স্থানেই কাজ করতে হচ্ছে। তবে একথা সত্য যে নারীর ভবিতব্য এই যে তাকে উভয় ক্ষেত্রেই লড়তে হবে ধনিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এছাড়া নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভের অন্য কোনো উপায় নেই ।