বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, বিভিন্ন প্রকার জেন্ডার ভূমিকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখ।
অথবা, বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, বিভিন্ন প্রকার জেন্ডার ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর।
অথবা, বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভূমিকার পরিচয় দাও।
উত্তর ভূমিকা :
জেন্ডার ধারণাটি গোটা বাংলাদেশে সম্প্রতি এসেছে। এ Conceptটি সমাজই দিয়েছে। তবে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলে বুঝা যাবে এটি সর্বপ্রথম এসেছে Family থেকে। কারণ Society এর আগেই Family. Gender শব্দটির আভিধানিক অর্থ লিঙ্গ (Sex)। সাধারণত ব্যাকরণেও জেন্ডার শব্দটি ব্যবহৃত হয় লিঙ্গ (Sex) চিহ্নিত
করার জন্য। যেমন- পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ, উভয় লিঙ্গ ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে জেন্ডার এবং Sex বা লিঙ্গ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে এলেও সাম্প্রতিককালে উন্নয়ন সাহিত্যে জেন্ডার ভিন্ন ও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাই আজ জেন্ডার এবং Sex এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য টানা হয়।
জেন্ডার ভূমিকা : সমাজে নারী ও পুরুষ সামাজিকভাবে নির্ধারিত কিছু কাজ ও দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যা জেন্ডার ভূমিকা (Gender role) বলে চিহ্নিত। অর্থাৎ, বিভিন্ন সমাজের নারী ও পুরুষরা বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে যে ভূমিকা পালন করে থাকে তা হলো জেন্ডার ভূমিকা। জেন্ডার ভূমিকা বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং তা জেন্ডার শ্রমবিভাগের উপর নির্ভরশীল। জেন্ডার ভূমিকা তিন ধরনের :
১. পুনঃউৎপাদনমূলক ভূমিকা (Reproductive role),
২. উৎপাদনমূলক ভূমিকা (Productive role),
৩. সামাজিক ভূমিকা (Community role).
নিম্নে বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার ভূমিকা আলোকপাত করা হলো :
১. পুনঃউৎপাদনমূলক ভূমিকা (Reproductive role) : সন্তান জন্মদান ও লালনপালন, রান্নাবান্না, ধোয়া মোছা,
মাজা ঘষা, ঘরদোর পরিষ্কার করা, পানি ও খড়ি সংগ্রহ, সেবাযত্ন করাসহ যাবতীয় গৃহস্থালি কাজকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে যে ভূমিকা পালিত হয় তাকেই বলে Reproductive role. অর্থাৎ, অতীত (দাদা-দাদী, নানা-নানী, বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি প্রমুখ) বর্তমান (স্বামী-স্ত্রী, দেবর-ননদ, ভাই-বোন ইত্যাদি) এবং ভবিষ্যৎ (পুত্র-কন্যা, নাতি-নাতনী) শ্রমশক্তি বা প্রজন্মের লালন পালন বা যত্ন নেয়াই হলো পুনঃউৎপাদনমূলক ভূমিকা পালন। সারা বিশ্বে সাধারণত এ ভূমিকা নারীরাই বেশি পালন
করে থাকে। যেহেতু এসব কাজের কোনো পারিশ্রমিক বা বিনিময় মূল্য নেই, তাই তা স্বীকৃতিহীন। অথচ এ কাজগুলো কেউ কোনো অর্থ বা দ্রব্যের বিনিময়ে করলে তা হয় উৎপাদনমূলক ভূমিকা। সন্তান ধারণ, জন্মদান ও লালনপালন হলো এ Reproductive role এর কেন্দ্রীয় বিষয়।
২. উৎপাদনমূলক ভূমিকা ( Productive role) : যে কাজের বিনিময় মূল্য আছে অর্থাৎ, সকল ধরনের আয় উপার্জনমূলক কাজের দ্বারা যে ভূমিকা পালন করা হয় তাকে বলে উৎপাদনমূলক ভূমিকা। উৎপাদনমূলক কাজের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর সম্ভাব্য বিনিময় মূল্য রয়েছে এবং এ বিনিময় মূল্য নগদ অর্থ বা দ্রব্যও হতে পারে। এককথায় বলা যায়,
যে কাজের বিনিময় মূল্য এবং ব্যবহারিক মূল্য রয়েছে, সে পণ্য উৎপাদনকারী ভূমিকাই হলো Productive role. সাধারণত বেশিরভাগ সমাজে পুরুষরাই এ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, নারী অনেক উৎপাদনমূলক ভূমিকার অন্তরালে হারিয়ে যায় বা ঢাকা পড়ে যায়। যেমন- গ্রামীণ নারীরা কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজগুলো তাদের গৃহকর্মের সাথে করে থাকেন। ফলে তা উৎপাদনশীল কাজ হিসেবে গণ্য হয় না। যেহেতু এসব কাজের কোনো বিনিময় মূল্য নেই, তাই তা উপেক্ষিত, স্বীকৃতিহীন।
৩. সামাজিক ভূমিকা (Community role) : যেসব কাজ কোন বিনিময় মূল্য, অর্থ বা পারিশ্রমিক ছাড়াই সমাজের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে করা হয়, তাকেই বলে সামাজিক ভূমিকা। এ সামাজিক ভূমিকা মূলত দু’ধরনের, যথা :
ক. সামাজিক ব্যবস্থাপনা ভূমিকা (Community managing role),
খ. সামাজি ক রাজনৈতিক ভূমিকা (Community politics role).
ক. সামাজিক ব্যবস্থাপনা ভূমিকা (Community managing role) : অর্থ বা পারিশ্রমিক ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে, সবার স্বার্থে যা করা হয়, তা হলো সামাজিক ব্যবস্থাপনা ভূমিকা। যেমন- গ্রামের সবাই বা কয়েকজন অথবা কেউ একাই পুরানো সাঁকো ও রাস্তা মেরামত করা, বাঁধ নির্মাণ করা, বিবাহ, মৃত্যুবার্ষিকী ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করা। নারী পুরুষ উভয়েই এ ভূমিকা পালন করে থাকে।
খ. সামাজিক রাজনৈতিক ভূমিকা (Community politics role) : অর্থ বা পারিশ্রমিক ব্যতিরেকে নিঃস্বার্থভাবে কোনো এলাকা বা সমাজে মানুষের কল্যাণার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে যে ভূমিকা পালন করে থাকে তা সামাজিক, রাজনৈতিক ভূমিকা। অর্থাৎ, সামাজিক ব্যবস্থাপনা ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকাটি হচ্ছে সামাজিক
রাজনৈতিক ভূমিকা। যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, কোথায় স্কুল হবে বা কোথায় নলকূপ বসবে তার সিদ্ধান্ত প্রদান, বিচার সালিসের বিচারক হওয়া ইত্যাদি। মোটকথা সমাজের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা হলো সামাজিক ব্যবস্থাপনা ভূমিকা, আর সামাজিক, রাজনৈতিক ভূমিকা ঐ কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, জেন্ডার ভূমিকা সমাজ ও সংস্কৃতিনির্ভর এবং তা পরিবর্তনশীল। সাধারণত পুরুষরা উৎপাদনমূলক ও সামাজিক (ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক) এ দু’ধরনের ভূমিকা বেশি পালন করে থাকে এবং নারীরা তিন ধরনের ভূমিকা পুনঃউৎপাদনমূলক, উৎপাদনমূলক, সামাজিক ভূমিকা পালন করে এবং এ তিনটি ভূমিকার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/