অথবা, জেন্ডার ও সেক্সের তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, লিঙ্গ কী? লিঙ্গ বা সেক্সের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর।
অথবা, জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, লিঙ্গ বলতে কী বুঝ? লিঙ্গ বা সেক্সের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ তুলে ধর।
অথবা, জেন্ডার বা লিঙ্গ কাকে বলে? লিঙ্গ বা সেক্সের মধ্যে মত পার্থক্যসমূহ বিস্তারিত লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : জেন্ডার ধারণাটি গোটা বাংলাদেশে সম্প্রতি এসেছে। এ Conceptটি সমাজই দিয়েছে। তবে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলে বুঝা যাবে এটি সর্বপ্রথম এসেছে Family থেকে। কারণ, Society এর আগেই Family. Gender শব্দটির আভিধানিক অর্থ লিঙ্গ (Sex)। সাধারণত ব্যাকরণের জেন্ডার শব্দটি ব্যবহৃত হয় লিঙ্গ (Sex) চিহ্নিত
করার জন্য। যেমন- পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ, উভয় লিঙ্গ ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে জেন্ডার এবং Sex বা লিঙ্গ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে এলেও সাম্প্রতিককালে উন্নয়ন সাহিত্যে জেন্ডার ভিন্ন ও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাই আজ জেন্ডার এবং Sex এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য টানা হয়।
জেন্ডার বা লিঙ্গ : সেক্স শব্দটির জৈবিক বা শারীরিক (Biological) প্রকাশ থেকে ভিন্নতর পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরার জন্য জেন্ডার শব্দটি প্রথম মনোবিজ্ঞানী এবং তারপর নারীবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে শুরু করে। জেন্ডার মূলত একটি অর্থঘন বা গূঢ় শব্দ যা একজন পুরুষ-নারী হিসেবে আমাদের সামাজিক পরিচয় যে প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত শারীরিক
বৈশিষ্ট্যের বদলে সামাজিকভাবে সৃষ্ট সেই সত্যটিকে প্রকাশ করে। জেন্ডার বলতে বুঝায় “Social organization of the relationship between the sexes.” অর্থাৎ, পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্পর্কের সামাজিক সংগঠন। অন্যভাবে বলা যায়, “জেন্ডার হলো নারী পুরুষের মধ্যে অনুভূত পার্থক্যের ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্কের উপাদান।”
জেণ্ডার বা লিঙ্গ ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্য : জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে জেন্ডার ও সেক্সের মধ্যে পার্থক্যসমূহ আলোকপাত করা হলো :
১. সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্যসূচক ভিন্নতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের স্বাতন্ত্র্যতা কিংবা শারীরবৃত্তিয়ভাবে নির্ধারিত নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য, যা অপরিবর্তনীয়।
আর জেন্ডার হচ্ছে সামাজিকভাবে গড়ে উঠা নারী পুরুষের পরিচয়, সামাজিকভাবে নির্ধারিত নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক। সমাজকর্তৃক আরোপিত নারী পুরুষের ভূমিকা যা পরিবর্তনীয়।
২. সেক্স বা লিঙ্গ হচ্ছে নারীত্ব ও পুরুষত্বের জৈবিক বা শারীরিক উপাদান। অপরপক্ষে, জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষ সম্বন্ধীয় মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বোধ।
৩.এ্যান ওকালে এর মতে, “সেক্স শারীরিক বৈশিষ্ট্য সূচিত।” অপরদিকে, জেন্ডার বৈশিষ্ট্য একটি নির্দিষ্ট সমাজে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ধারিত।
৪. জৈবিক ও শারীরিক অবস্থা যেমন- ক্রোমোজম, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ যৌন অঙ্গ অর্থাৎ, নারী পুরুষের বিভিন্ন যৌন ও প্রজনন অঙ্গ ইত্যাদি নির্ধারণ করে নারী পুরুষের সেক্স। আর জেন্ডার নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট সমাজের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
৫. বাংলায় সেক্স ও জেন্ডার দুটির অর্থই লিঙ্গ। কিন্তু সেক্স সেই লিঙ্গ যা Biological. এ লিঙ্গ নারীর আছে পুরুষেরও আছে, এ লিঙ্গ শারীরিক। কিন্তু আরেকটি লিঙ্গ আছে যা শরীরের বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়, যা জৈব
নয় সামাজিক। সে লিঙ্গটির নাম জেন্ডার।
৬. সাম্প্রতিককালে অনেকেই সেক্সকে জৈব লিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সামাজিক লিঙ্গ বলে অভিহিত করেছেন।
৭. জেন্ডার হলো আরোপিত, সমাজ সংস্কৃতিভিত্তিক, আচার আচরণগত এবং স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন সমাজ
সংস্কৃতিতে পরিবর্তনীয়। আর সেক্স হলো প্রাকৃতিক, শারীরিক, পূর্ব নির্ধারিত এবং অপরিব
র্তনীয়।
৮. নারী সন্তান ধারণ করে, নারীর এ ভূমিকা সেক্স ভূমিকা। জীববিজ্ঞানের নিয়মে একমাত্র নারী ‘সন্তান ধারণে সক্ষম পুরুষ নয়, পুরুষ এখানে অক্ষম। অপরপক্ষে, সমাজ সন্তান পালনের দায়িত্ব এককভাবে নারীর উপর
পিয়ে দিয়েছে এ যুক্তিতে যে সন্তান প্রতিপালন নারীর জৈবিক ভূমিকা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়, পুরুষ ইচ্ছা করলে সন্তান পালন করতে পারে। কাজেই সন্তান প্রতিপালন নারীর সেক্স ভূমিকা নয়, এ ভূমিকা নারীর উপর চাপিয়ে দেয়া সমাজ সৃষ্ট ভূমিকা। অর্থাৎ, সন্তান প্রতিপালন নারীর জেন্ডার ভূমিকা।
৯.সেক্স নারী ও পুরুষের জৈবিক পরিচয় বহন করে। কিন্তু জেন্ডার নারী ও পুরুষের উপর আরোপিত সামাজিক পরিচয় বহন করে।
১০. সমাজ বিনির্মিত নারী পুরুষ কর্মবিভাজন, জেন্ডার কর্মবিভাজন। কারণ, ইচ্ছা করলেই এ কর্মবিভাজন বদলে দেয়া যায়। অপরপক্ষে, নারী পুরুষ কর্মবিভাজন, সেক্স কর্মবিভাজন নয়। এতে জীববিজ্ঞানের নিয়মে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, সেক্স ও জেন্ডার দুটির অর্থই লিঙ্গ হলেও তাদের মধ্যে উপর্যুক্ত পার্থক্যসমূহ বিদ্যমান। মূলত, জেন্ডার সম্পর্ক সংস্কৃতি, জাতি, ধর্ম, শ্রেণিভেদে বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন রকম হলেও গোটা বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাধারণত অভিন্ন অবস্থা বিদ্যমান।