খুব জ্যোৎস্না উঠিয়াছিল, বাড়ির পেছনে ষাঁড়া গাছের ঝোপের মাথায় তেলাকুচা লতার থোলো থোলো সাদা ফুলের মধ্যে জ্যোৎস্না আটকিয়া রহিয়াছে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রূপকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘পুইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ক্ষেন্তি যখন আর বেঁচে নেই তখন পরবর্তী পৌষ-পার্বণের রাতের প্রাকৃতিক দৃশ্যের একটি মনোজ্ঞ বর্ণনা এখানে বিবৃত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ক্ষেন্তি ছিল সহায়হরি চাটুয্যে ও অন্নপূর্ণার জ্যেষ্ঠা কন্যা। অভাবের কারণে ক্ষেন্তির যথাসময়ে বিয়ে হচ্ছিল না। একারণে মাতা-পিতার দুশ্চিন্তার অভাব ছিল না। অবশেষে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও চল্লিশোত্তর এক পাত্রের সাথে ক্ষেন্তির বিয়ে হয়ে গেল। পাত্রপক্ষ ছিল চামার প্রকৃতির। পণের আড়াইশ টাকা বাকি থাকার কারণে এক বছরের মধ্যে তারা ক্ষেন্তিকে বাপের বাড়িতে আসতে দিল না। হঠাৎ ক্ষেন্তি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলো। তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সহায়হরিকে একটা খবর পর্যহন্ত দিল না। বিনা চিকিৎসায় ক্ষেন্তি মারা গেল। পরবর্তী পৌষ পার্বণের দিনে অন্নপূর্ণা মেয়েদের জন্য পিঠে তৈরি করতে বসেছেন। আজ আর ক্ষেরি নেই। সে আর কোনদিন ফিরে আসবে না। গোলা তৈরি হয়ে গেল। খোলা আগুনে চড়িয়ে অন্নপূর্ণা প্রথম পিঠেটি তৈরি করে পুঁটিয়ে দিলেন ষাঁড়া ষষ্ঠীকে দেওয়ার জন্য। পুঁটি রাধীকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে গেল পিঠে ফেলতে। তখন আকাশে খুব চাঁদ উঠেছিল। চাঁদের আলোয় চারদিক জ্বলজ্বল করছিল। বাড়ির পেছনে ষাঁড়া গাছের ঝোপের মাথায় তেলাকুচা লতার থোলো থোলো সাদা ফুলের মধ্যে জ্যোৎস্না আটকে ছিল।
মন্তব্য : পিঠে বানানোর রাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে গিয়ে গল্পকার এই রাতটির বিশেষত্বের প্রতি প্রচ্ছ ইঙ্গিত করেছেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%81%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%b7/