উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রূপকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘পুঁইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : উক্তিটি অন্নপূর্ণার। স্বামীর বৃথা আস্ফালনকে কটাক্ষ করে তিনি এই শ্লেষাত্মক উক্তিটি করেছিলেন।
বিশ্লেষণ : সহায়হরি চাটুয্যে একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ। একদিন রান্নাঘরের বারান্দায় বসে সহায়হরির স্ত্রী অন্নপূর্ণা স্নানে যাবার পূর্বে চুলে নারকেলের তেল মাখছিলেন। এমন সময় সহায়হরি বাড়িতে প্রবেশ করে তারক-খুড়োর কাছ থেকে রস চেয়ে আনার জন্য স্ত্রীর কাছে ঘটি বা বাটি জাতীয় একটা কিছু প্রার্থনা করেন। অন্যের জিনিস চেয়ে-চিন্তে আনার ব্যাপারে সহায়হরির জুড়ি ছিল না। কিন্তু অন্নপূর্ণা স্বামীর এই স্বভাবটি একদম পছন্দ করতেন না। ঘরে তাদের অরক্ষণীয়া মেয়ে ক্ষেন্তি। আশীর্বাদ হয়েও একবার তার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় গ্রামে নানা কথাবার্তা উঠেছে। সহায়হরির সে ব্যাপারে কোন উদ্বেগ নেই। তিনি আছেন কার কাছ থেকে কি চেয়ে আনা যায় সেই তালে। অন্নপূর্ণা স্বামীর এই ঔদাসীন্যে বিরক্ত হয়ে গ্রামের সমাজপতিরা যে তাঁদেরকে একঘরে করার চিন্তা করছে সে সম্পর্কে স্বামীকে অবহিত করলেন। স্ত্রীর মুখে একথা শুনে সহায়হরি তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বললেন, “এই! আমি বলি না জানি কি ব্যাপার! একঘরে! সবাই একঘরে করেছেন এবার বাকি আছেন কালীময় ঠাকুর! ও!” সহায়হরির এই অর্থহীন আস্ফালন দেখে অন্নপূর্ণা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি তখন স্বামীকে উল্লিখিত কথাগুলো বলেছিলেন। অন্নপূর্ণা ঠিকই বলেছেন। সহায়হরি নিতান্ত দরিদ্র মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে সমাজপতিদের ব্যবস্থা নিতে কোন বেগ পেতে হয় না।
মন্তব্য : সবলের পক্ষে দুর্বলের বিচার করা কোন কঠিন কাজ নয়। দুর্বলেরা চিরকালই সবলের কাছে গুরুত্বহীন।