বিপত্নীক পুরুষের চেয়ে বিধবা নারীর সংখ্যা বেশী হওয়ার কারণ কী?

ভূমিকা:

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একটি সাধারণ চিত্র দেখা যায় যে বিপত্নীক পুরুষের তুলনায় বিধবা নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই জনমিতিক ভারসাম্যহীনতার পেছনে সামাজিক, জৈবিক এবং অর্থনৈতিক কারণগুলো জটিলভাবে জড়িত। কেবল একটিমাত্র কারণকে চিহ্নিত করা কঠিন, বরং বিভিন্ন কারণের সম্মিলিত প্রভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই প্রবন্ধে আমরা সেই প্রধান কারণগুলো অনুসন্ধান করার চেষ্টা করব।

কারণসমূহ:

১. পুরুষদের গড় আয়ু কম: সাধারণভাবে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের গড় আয়ু কম হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার ধরণ, ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকা, ধূমপান ও মদ্যপানের প্রবণতা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব। হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং দুর্ঘটনার মতো কারণে পুরুষরা তুলনামূলকভাবে কম বয়সে মারা যান, যা তাদের স্ত্রীদের বিধবা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

২. পুনর্বিবাহের প্রবণতা: বিধবা নারীদের তুলনায় বিপত্নীক পুরুষদের মধ্যে পুনর্বিবাহের প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। সামাজিক এবং পারিবারিক সমর্থন পুরুষদের পুনরায় সঙ্গী খুঁজে নিতে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে, অনেক ক্ষেত্রে বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহের ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা, সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব এবং ব্যক্তিগত দ্বিধা কাজ করে। ফলে, পুরুষরা দ্রুত নতুন জীবন শুরু করলেও অনেক নারী নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে বাধ্য হন।

৩. যুদ্ধ ও সহিংসতা: বিভিন্ন যুদ্ধ, জাতিগত সংঘাত এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে বহু পুরুষ তাদের জীবন হারান। এর ফলস্বরূপ অসংখ্য নারী বিধবা হন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পুরুষদের মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে, যা বিধবা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

৪. পেশাগত ঝুঁকি: পুরুষরা সাধারণত এমন অনেক পেশায় নিয়োজিত থাকেন যেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে, যেমন নির্মাণ কাজ, খনি শ্রমিক, সামরিক বাহিনী ইত্যাদি। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে অনেক পুরুষ অকালে মারা যান এবং তাদের স্ত্রীরা বিধবা হন।

৫. স্বাস্থ্যসেবার অভাব ও সচেতনতার অভাব: অনেক উন্নয়নশীল দেশে পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অনীহা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব দেখা যায়। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে অনেক পুরুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সেই মারা যান।

৬. সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা: ঐতিহ্যগতভাবে অনেক সমাজে নারীরা আর্থিকভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকেন। স্বামীর মৃত্যুতে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে পুনর্বিবাহ তাদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অবলম্বন হতে পারত, কিন্তু সামাজিক কারণে সেটি সবসময় সম্ভব হয় না।

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায়, বিপত্নীক পুরুষের চেয়ে বিধবা নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। পুরুষদের কম গড় আয়ু, তাদের মধ্যে পুনর্বিবাহের উচ্চ প্রবণতা, যুদ্ধ ও সহিংসতার প্রভাব, ঝুঁকিপূর্ণ পেশা, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট—এই সমস্ত কারণ সম্মিলিতভাবে বিধবা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এই জনমিতিক ভারসাম্যহীনতা সমাজে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, যা মোকাবিলায় সামগ্রিক এবং সংবেদনশীল পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিধবা নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।