বাংলাদেশের ১৯৯০ সালের গনঅদ্ধুথানের কারণ ও আলোচনা কর ?

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা, যা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। এই অভ্যুত্থানের মূল কারণ ও প্রেক্ষাপট নিম্নরূপ:

কারণসমূহ:

১. এরশাদের স্বৈরশাসন:

  • ১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ দীর্ঘ ৯ বছর ধরে স্বৈরাচারী শাসন চালান।
  • সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

২. নির্বাচনে কারচুপি ও গণবিরোধী নীতি:

  • ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠে।
  • বিরোধী দলগুলোর দাবি ছিল যে এরশাদ জনমতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা ধরে রাখছেন।

৩. অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতি:

  • এরশাদ সরকারের আমলে দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
  • সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অবনতি ঘটে, যা জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়।

৪. বিরোধী দলের ঐক্য:

  • আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দল এরশাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়।
  • তারা “৮-দলীয় জোট” ও “৭-দলীয় জোট” গঠন করে গণআন্দোলনকে সংগঠিত করে।

৫. ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা:

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এরশাদের পতনের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে।
  • ১৯৯০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান তীব্র রূপ নেয়।

৬. সেনাবাহিনীর সমর্থন হ্রাস:

  • এরশাদের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন কমে যায় এবং চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল:

  • ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেন এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
  • ১৯৯১ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে বিএনপি বিজয়ী হয় এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন।
  • বাংলাদেশ পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যায়।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য:

১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি মাইলফলক। এটি প্রমাণ করে যে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন স্বৈরশাসনের পতন ঘটাতে সক্ষম। তবে পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব গণতন্ত্রের পথকে আবারও বাধাগ্রস্ত করে।

এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে “গণতন্ত্রের দ্বিতীয় সংগ্রাম” হিসেবে স্বীকৃত।