ভূমিকা: বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীরা সমাজের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা গঠন করে এবং তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। ১৯৯৭ সালের স্থানীয় সরকার (সংশোধন) অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। এর ফলে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা নারীদের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণের সমস্যা:
১. ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ ভূমিকা ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব: সমাজে প্রগতিশীল পরিবর্তন সত্ত্বেও, ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ ভূমিকা ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান, যা নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে হুমকির মুখে ফেলে। অনেকেই মনে করেন নারীদের স্থান ঘরে, রাজনীতিতে নয়।
২. পারিবারিক বাধা: পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রায়শই নারীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বা স্থানীয় সরকারের কাজে অংশগ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করে। ঘরের কাজ ও শিশুদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব নারীদের উপর বর্তায়, যা তাদের সময় ও শক্তিকে সীমাবদ্ধ করে।
৩. সহিংসতা ও হয়রানির ঝুঁকি: নির্বাচনী প্রচারণা ও কাজের সময় নারীরা প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক হয়রানি, ভয় দেখানো এবং এমনকি সহিংসতার শিকার হন। এটি অনেক নারীকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে।
৪. আর্থিক সীমাবদ্ধতা: নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয়বহুল হতে পারে, যা অনেক নারীর জন্য অসাধ্য। তাদের পুরুষ প্রতিপক্ষদের তুলনায় আর্থিক সংস্থানের অভাব থাকে।
৫. নেতৃত্বের অভাব ও দক্ষতার ঘাটতি: নারীদের প্রশিক্ষণ ও ক্ষমতায়নের অভাব তাদের নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা পুরুষ প্রতিপক্ষদের তুলনায় নিজেদের প্রার্থী হিসেবে কম আত্মবিশ্বাসী বোধ করতে পারে।
৬. নীতিগত দুর্বলতা: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত নীতিগত পদক্ষেপ নেই। সংরক্ষিত আসন ছাড়াও, নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির জন্য আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে।
৭. ডেটা ও তথ্যের অভাব: স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণের স্তর, তাদের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ডেটা ও তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। এর ফলে নীতি নির্ধারকদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৮. সচেতনতার অভাব: নারীদের নিজস্ব অধিকার ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ সম্পর্কে অনেক নারীই অজ্ঞ।
৯. প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাব: নারী প্রার্থী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হয় না। এর ফলে তারা তাদের ভূমিকা পালনে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না।
১০ দুর্নীতি ও পক্ষপাত: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও পক্ষপাত নারীদের অংশগ্রহণকে আরও কঠিন করে তোলে।
উপসংহার: বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি একটি জরুরি বিষয়। নীতি নির্ধারক, কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আরও বেশি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।