ভূমিকা : স্থানীয় সরকার হল একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান যা স্থানীয় পর্যায়ে সেবা প্রদান এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত হয়। এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের চাহিদা পূরণ এবং তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম, কাঠামো, এবং নীতি অধ্যয়ন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিগুলি গবেষক ও প্রশাসকদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং সাফল্য মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
স্থানীয় সরকার অধ্যয়নের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. অভিজ্ঞতাবাদী পদ্ধতি: অভিজ্ঞতাবাদী পদ্ধতি হলো বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জ্ঞান আহরণের একটি পদ্ধতি। স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে এটি ব্যবহার করা হয় যখন গবেষকরা প্রকৃত ঘটনার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফল বিশ্লেষণ করেন।
২. ঐতিহাসিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে গবেষকরা অতীতের ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করেন এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকারের বিকাশ, পরিবর্তন ও তার প্রভাবসমূহ মূল্যায়ন করেন। এটি স্থানীয় সরকারের কার্যকলাপের সময়ানুগ অধ্যয়ন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
৩. তুলনামূলক পদ্ধতি: তুলনামূলক পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশের বা অঞ্চলের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে তুলনা করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন মডেলের পার্থক্য ও সাদৃশ্য নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং কার্যকরী ও অনুকরণীয় দিকগুলো চিহ্নিত করা যায়।
৪. পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে গবেষকরা সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম, জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া, ও বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।
৫. দার্শনিক পদ্ধতি: দার্শনিক পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের মূলনীতি ও নীতিশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে গবেষণা করা হয়। এখানে স্থানীয় সরকারের কাঠামো, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়।
৬. প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তাদের কার্যাবলী, সংগঠন ও সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত ও কার্যগত দিকগুলো অধ্যয়ন করা হয়।
৭. আচরণগত পদ্ধতি: আচরণগত পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ, মনোভাব ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এটি স্থানীয় সরকারের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৮. কাঠামো কার্যগত পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও তাদের কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়। এটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কার্যক্রমের কাঠামো ও তাদের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৯. পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি: পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। এটি স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম ও কর্মসূচির কার্যকারিতা পরিমাপের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
১০. মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের মানসিকতা ও মনোবিজ্ঞান বিশ্লেষণ করা হয়। স্থানীয় সরকারের কার্যকলাপে ব্যক্তিগত ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবগুলি অধ্যয়ন করা হয়।
১১. গ্রুপ পদ্ধতি: গ্রুপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর কার্যক্রম ও তাদের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভূমিকা এবং তাদের প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়।
১২. সিদ্ধান্তিক পদ্ধতি: দ্বিধান্বিত পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, নীতি ও তাদের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়। স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি পদ্ধতিই স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করে গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিটি পদ্ধতিই স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করে গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন।