উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশ প্রকৃত পক্ষে একটি বিশাল গ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশের তিরাশি হাজার গ্রামে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাস করে। তাই বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের গুরুত্ব বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পল্লী উন্নয়নের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
১. কৃষি উন্নয়ন : কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দেশের জাতীয় আয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ কৃষি থেকে আসে। তাই কৃষির উন্নতি আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু গ্রামের সার্বিক উন্নতি না হলে কৃষির উন্নতি সম্ভব নয়। পরিকল্পিত পল্লী উন্নয়ন শুরু হলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে এবং তার ফলে কৃষির আধুনিকীকরণ সম্ভবপর হবে।
২. শিল্পায়ন : বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন দেশের শিল্পোন্নয়কেও প্রভাবিত করে। পল্লী উন্নয়নের ফলে কৃষির উন্নতি হলে শিল্পের কাঁচামালের যোগান কৃষি পাবে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পজাত পণ্যের বাজার বিস্তৃত হবে। এতে দেশের শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।
৩. গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন: গ্রামীণ অবকাঠামো গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তাই গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নতি করা না গেলে অর্থাৎ রাস্তাঘাট, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি না হলে গ্রামীণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুতরাং পল্লীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে।
৪. জাতীয় আয় বৃদ্ধিঃ পল্লীর উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি হলে দেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। আবার জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়বে এবং জাতীয় উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।
৫. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা: দেশের বর্তমান বেকার সমস্যার পূর্ত কর্মসূচির যথাশ্রীঘ্র কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার গুরুত্ব অপরিসীম। এই উদ্দেশ্যে দ্রুত গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন একান্ত আবশ্যক। পল্লী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গ্রামের বেকার যুবকদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারলে আমাদের বেকার সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে।
৬. প্রামীণ সম্পদেরপূর্ণ ব্যবহার : পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের অব্যবহৃত প্রাকৃতিক ও জন সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো সম্ভব। এতে জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি পাবে।
৭. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: জনসংখ্যা বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে পূর্বেই চিহ্নিত করা হয়েছে। জনসংখ্যা বুদ্ধির বর্তমান গতি বোধ করতে না পারলে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। পল্লীর উন্নয়ন হলে সেখানে
- শিক্ষার হার বাড়বে ও জনগণের কুসংস্কার দূর হবে। ফলে জন্ম হার হ্রাস পাবে।
৮. রপ্তানি বৃদ্ধিঃ পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি সাধিত হলে আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি-রপ্তানির ব্যবধান হ্রাস পেয়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য দেশের অনুকূলে আসবে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহ ভাগ কৃষি পণ্য ও কৃষিভিত্তিক শিল্প দ্রব্য নিয়ে গঠিত।
৯. গ্রামীণ মূলধন গঠন : গ্রামাঞ্চলে ব্যাংক, বিমা কোম্পানি প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভাবে আমাদের গ্রামীণ জনসাধরণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো একত্রিত হয়ে মূলধন গঠিত হতে পারে না। গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হলে এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ সঞ্চয়কে একত্রিত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগানো যাবে।
১০. ভারসাম্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি করা হলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য দূর হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় সঙ্গতি ও সামাজিক ন্যায্য বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অরসাম্য বিশিষ্টা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজনীয়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পল্লীর প্রতি অবয়বে উন্নয়নের ছোয়া লাগিয়ে পল্লীর জনগণের সাবিক উন্নয়ন সাধন পল্লীর কর্মসূচির উদ্দেশ্য।