অথবা, বাংলাদেশে কিভাবে আয় বণ্টনের অসমতা দূর করা যায়?
উত্তর : ভূমিকা : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনিবার্য ফল স্বরূপ জনসাধারণের মধ্যে আয় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা দেয় এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলে। বাংলাদেশে আয় বৈষম্য থাকায় নানামূখী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে আয় বৈষম্য হ্রাসের উদ্দেশ্যে নিম্মোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. ভূমি সংস্কারঃ ভূমির অসম বণ্টন বাংলাদেশের আয় বৈষম্যের জন্য প্রধানত দায়ী। এজন্য আয় বৈষম্য হ্রাস করতে হলে উপযুক্ত ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে ভূমির মালিকানার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।
২. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিঃ আয়ের সুষম বণ্টনের একটি প্রধান উপায় হলো গ্রামীণ ও শহরে খাতে অতিরিক্তি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৩. কর ব্যবস্থার সংশোধন: উপযুক্ত করনীতির সাহায্যে আয় বৈষম্য হ্রাস করা যায়। ধনীদের উপর অধিক কর আরোপ ও গরীবদের কর মওকুফ করা হলে আয় বৈষম্য হ্রাস পায়। এ উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ করা বৃদ্ধি ও পরোক্ষ করা হ্রাস করা যেতে পারে। ধনীদের মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়া প্রবণতা রয়েছে তা রোধ করতে হবে।
৪. ন্যূনতম মজুরি আইন: বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি আইন থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়োগ হয় না। সুতরাং শ্রমিক যাতে ন্যূনতম মজুরি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শ্রম প্রগাঢ় প্রযুক্তি ব্যবস্থার: উৎপাদন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শ্রম প্রগাঢ় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ফলে আয় বৈষম্য হ্রাস পাবে।
৬. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: আয় ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন সম্পর্কিত দীর্ঘকালীন নীতিগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ অন্যতম প্রধান। বড় পরিবারের অর্থ হলো নিম্ন মাথা পিছু আয়। পরিবারের আয়তন ছোট হলে আয়স্তর উন্নীত হবে।
৭. দাম নিয়ন্ত্রণ: মুদ্রাস্ফীতির ফলে বাংলাদেশে ধনীও দারিদ্রের ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে। সুতরাং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সরকার কর্তৃক দেয়া দরকার।
৮. দুর্নীতি দমন:দুর্নীতির মাধ্যমে এ দেশের এক শ্রেণির লোক দারিদ্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে রাতরাতি বড় লোক হচ্ছে। সুতরাং দুর্নীতি দমনে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
৯. একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ: একচেটিয়া কারবার সমাজে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি করে মুষ্টিমের একচেটিয়া কারবারি বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শোষণ করে। সুতরাং আয়-বৈষম্য হ্রাস করতে হলে একচেটিয়া শোষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০. দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিঃ সমাজের দরিদ্র ও অবনত শ্রেণির আয় বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ দরকার। আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই এ ধরণের কিছু সংখ্যক কর্মসূচি চালু হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তাঁ খুবই নগণ্য।ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মসূচির পরিধি আরও বিস্তৃত করতে হবে।
১১. আর্থিক শক্তির কেন্দ্রীকরণ হ্রাস: আয় বৈষম্য কমানোর আর একটি উপায় হলো দেশে উদীয়মান আর্থিক শক্তির কেন্দ্রীকরণ হ্রাস। এ জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পবিত্তের লোকদেরকে ক্ষুদ্রশিল্প গড়ে তুলতে সাহয্যে করা উচিত।
১২. অনুন্নত অঞ্চলের উন্নয়ন: আয় বৈষম্য হ্রাসের জন্য দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলোর কৃষি ও শিল্পোন্নয়ন অত্যাবশ্যক। এসব এলাকার লোকজনের জন্য অর্থবহ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে রাস্তা-ঘাট, পয়প্রণালি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য বুনিয়াদ স্থাপন করা উচিত।
১৩. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিঃ বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি। তবে কিছু কিছু কর্মসূচি বর্তমানে চালু রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি দারিদ্র্যে লাখবে সহায়ক। সুতরাং বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি আরও ব্যাপক ও কার্যকর করতে হবে।
১৪. শ্রমিক সংঘ কার্যক্রমঃ শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য শ্রমিক সংঘ গঠন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের শ্রমিক সংঘকে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে।
১৫. শ্রমিক কল্যাণমূলক কর্মসূচিঃ শ্রমিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ হবে। শ্রমিক মালিক সম্পর্ক উন্নতি করতে হবে।
১৬. জনকল্যাণমূলক সরকারি ব্যয়ঃ জনকল্যাণমূলক খাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি সমাজে আয় বৈষম্য হ্রাস করতে যথেষ্ট সহায়ক হয়।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে আয়-বৈষম্য বহুলাংশে হ্রাস করা যেতে পারে।