অথবা, বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর অসম আয় বণ্টনের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: আয়ের অসম বণ্টন ধনতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে আয়ের অসম বণ্টনের ফলে অর্থনীতি নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আয় বণ্টনের বৈষম্যের ফলে সমাজের যে ক্ষতি হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
১. গণদারিদ্র্যতা বৃদ্ধিঃ যদি দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রিভূত হয়, তবে দেশের দরিদ্র জনগণ দরিদ্র হতে হত দরিদ্রে পরিণত হবে।
২. বেকারত্ব বৃদ্ধি: আয়ের অসম বণ্টনের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আয় ও নিম্ন চাহিদা, উৎপাদন ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করে। ফলে নতুন নতুন শিল্প কারখান গড়ে উঠে না। এতে বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করে।
৩. অস্থিতিশীল সমাজের আর্বিভাব। যতই ধনী ও দারিদ্র্যের ব্যবধান বৃদ্ধি পাবে ততই দারিদ্র জনগণের মধ্যে।
৪. ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ গ্রামাঞ্চলে আয় বণ্টনের বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।পাচ্ছে এবং গ্রামীর দারিদ্র্য তীব্রতর হচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে প্রান্তির ও ক্ষুদ্র চাষীরা ক্রমশ ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হচ্ছে।
৫. খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবেঃ অসম আয় বণ্টনের মাধ্যমে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। এ কারণে খাদ্য সংকট তৈরি হবে।
৬. সম্পদের অপব্যয়ঃ আয় বৈষম্যের ফলে সমাজের সীমিত সম্পদের অপচয় হচ্ছে। যে সম্পদ দ্বারা প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদিত হতে পারত তা মুষ্টিমের ধনীদের বিলাস দ্রব্য উৎপাদনে নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে দরিদ্রদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে না। এভাবে দেশের সম্পদের অপব্যয় ঘটছে।
৭. ভোগ ব্যয় হ্রাস: অসম আয় বণ্টনের ফলে সমাজের ব্যাপক জনগণের ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে কার্যকর চাহিদা হ্রাস পেপয়ে কার্যকর চাহিদা হ্রাস পাবে। ফলে ভোগ ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
৮. শ্রেণি শোষণ : অসম আয় বণ্টনের কারণে সমাজে শ্রেণি শোষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুষ্টিমের সুবিধা ভোগী লোক দারিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে শোষণ করছে। এর ফলে তাদেরকে আরোও কঠোর নির্যাতন লাঞ্চনা ভোগ করতে হবে।
৯. বিনিয়োগ হ্রাস পাবে: অসম আয় বণ্টনের ফলে সমাজের ব্যাপক জনগণের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাসের কারণে দেশে বিনেয়োগ হ্রাস পাবে।
১০. মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যাহতঃ আয় বৈষমের ফলে দেশের মানুষ অশিক্ষা দুষ্টিহীন ইত্যাদির শিকার হয়ে পড়ছে। ফলে মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
১১. সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়: আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেলে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে জনগোষ্ঠী চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, রাহাজানিসহ নানা প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে।
১২. শহর ও গ্রামের ব্যবধান বৃদ্ধিঃ আয়ের অসম বন্টনের ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে উন্নয়নের ব্যবধান সৃষ্টি হবে। গ্রাম বঞ্চিত হবে, শহর প্রাধান্য পাবে।
১৩. বিপ্লবের কারণঃ সম্পদের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য সমাজে গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এতে সমাজে শ্রেণি সংগ্রাম ও শ্রেণি সংঘর্ষ শুরু হয়। এরিস্টটলের মতে, চরম আয় বৈষম্যই সমাজ বিপ্লবের মূল কারণ।
১৪. সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহতঃ আয় বৈষম্যের ফলে চাহিদা প্রভাবিত হয়। জনগণই চাহিদার উৎস। কিন্তু বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণ আয়ের অভাবে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে জাতীয় আয়ের অসম বণ্টনে উৎপাদন কম হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায়, আয়ের অসম বণ্টনের ফলে বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং সমাজে অস্থিরতা দেখা দিবে।