উত্তর : অনুন্নত দেশে (Under developed Country): অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেনি এমন দেশসমূহে স্বল্প উৎপাদনের কারণে জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান অতি নিম্ন। যে সকল দেশে উন্নত উৎপাদন কৌশল ব্যবহারের অভাবে উৎপাদন স্বল্প ও জনগণের জীবনযাত্রার মান অতি নিম্ন, সে সকল দেশকে অনুন্নত দেশ বলে অভিহিত করা যায়। এ সকল দেশে পরিলক্ষিত হয় স্বল্প মাথা পিছু আয়, শিল্পের অনগ্রসরতা, কৃষির উপর নির্ভরশীলতা, জীবনযাত্রার
নিম্নমান, মূলধনের অভাব, জনসংখ্যার চাপ, ব্যাপক বেকারত্ব প্রভৃতি। প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে অনুন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রদান করেছেনঃ
অধ্যাপক ব্যাগনার নার্কসের মতে, “অনুন্নত দেশটি হচ্ছে উন্নত দেশের তুলনায় জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে স্বল্প পুঁজি সমৃদ্ধ দেশ।”
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, “যে সব দেশের মাথাপিছু আয়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কম সেগুলোকে অনুন্নত দেশ বলা যায়।”
অধ্যাপক বুকানন ও এলিস-এর মতে, “অনুন্নত দেশ বলতে সেসব দেশকেই বোঝায় যাদের অধিবাসীরা উন্নত দেশের তুলনায় নিম্ন মানের সম্পদ ভোগ করে।”
অধ্যাপক বুয়ার ও ইয়ামী বলেন (Baur and Yemey), অনুন্নত দেশ বলতে সে দেশকে বুঝায় যে দেশের অধিবাসীদের প্রকৃত আয় ও মাথা পিছু আয় ও মূলধন উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের মাথাপিছু আয় ও মূলধনের তুলনায় কমে।”
অধ্যাপক পল, এ স্যামুয়েলসন এর মতে, “অনুন্নত দেশ বলতে অতি সাধারণভাবে সে দেশগুলোকে বোঝায়, যেগুলোর মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে বর্তমান সময়ের কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে কম।”
উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশেষণ করলে আমরা বলতে পারি, যে সব দেশে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে কৃষি নির্ভর, কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাব এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তথা নিম্ন জীবনযাত্রার মান বিদ্যমান, সে সব দেশকে অনুন্নত দেশ বলা যায়। অথবা, যে সকল দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা মোটেই নেই, প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার করা হয়নি মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট স্বল্প, অর্থনীতি স্থবির, পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা নিত্য সঙ্গী, যে সব দেশকে অনুন্নত দেশ বলে।