স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পরিধি ও বিষয়বস্তু ব্যাপক ও জটিল। এটি কেবলমাত্র একটি সামরিক সংগ্রামের ইতিহাস নয়, বরং এটি একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস। এটি একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ইতিহাস।
এই ইতিহাসের পরিধি নিম্নরূপ:
- ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের মধ্য দিয়ে। ভারত বিভাগের ফলে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলায় বিভক্ত হয়। পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের মধ্যে স্বাধীনতার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।
- জাতীয়তাবাদী আন্দোলন: ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ব বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
- সামরিক সংগ্রাম: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে পূর্ব বাংলায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয় এবং সামরিক সংগ্রামের পথ উন্মুক্ত হয়।
- স্বাধীনতা যুদ্ধ: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলায় গণহত্যা চালায়। এর ফলে পূর্ব বাংলায় স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধে ৯ মাস ধরে পাকিস্তান সেনাদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা বীরোত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালায়।
- স্বাধীনতা অর্জন: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
এই ইতিহাসের বিষয়বস্তু নিম্নরূপ:
- জাতীয়তাবাদ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের মূল বিষয়বস্তু হল জাতীয়তাবাদ। এই ইতিহাসে পূর্ব বাংলার জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রাম ফুটে উঠেছে।
- সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় শুধুমাত্র একটি সামরিক বিজয় ছিল না, এটি একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবেরও সূচনা করেছিল। এই বিপ্লবের ফলে পূর্ব বাংলায় একটি নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ইতিহাস আমাদের জাতীয়তাবাদের চেতনা ও সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের মহিমা স্মরণ করিয়ে দেয়।