ব্যবস্থাপনা চিন্তাধারা স্কুল বলতে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জ্ঞানের স্বতন্ত্র ধারা বা মতবাদকে বোঝায়। এই স্কুলগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারণা রয়েছে। ব্যবস্থাপনা চিন্তাধারা স্কুলগুলোকে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়:
- প্রাক-প্রশাসনিক স্কুল (Pre-Administrative School): এই স্কুলের চিন্তাবিদরা ব্যবস্থাপনাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করেননি। তারা ব্যবস্থাপনাকে একটি শিল্প বা কলা হিসেবে বিবেচনা করেন। এই স্কুলের উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছেন চার্লস ব্যাবেজ, ফ্রেডরিক উইনসলো টেইলর, এবং ফ্লোয়েড ওয়াইজলি।
- প্রশাসনিক স্কুল (Administrative School): এই স্কুলের চিন্তাবিদরা ব্যবস্থাপনাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করেন। তারা ব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণ নীতি এবং পদ্ধতি প্রণয়নের উপর জোর দেন। এই স্কুলের উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রেডরিক উইনসলো টেইলর, হেনরি ফাইওল, এবং লিওনার্ড উইলিয়ামস।
- মানব আচরণগত স্কুল (Human Relations School): এই স্কুলের চিন্তাবিদরা ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। তারা কর্মীদের আচরণ এবং মনোবিজ্ঞানের উপর জোর দেন। এই স্কুলের উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছেন মেরি পার্কার ফোলেট, অ্যাব্রাহাম ম্যাসলো, এবং ডগলাস ম্যাকগ্রেগর।
- সিস্টেম স্কুল (Systems School): এই স্কুলের চিন্তাবিদরা ব্যবস্থাপনাকে একটি জটিল ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করেন। তারা ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। এই স্কুলের উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছেন চার্লস বার্নার্ড, লুডভিগ ভন বের্টালানফি, এবং রবার্ট কনট্রা।
ব্যবস্থাপনা চিন্তাধারা স্কুলগুলো ব্যবস্থাপনার ধারণা এবং পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এগুলো আজকের ব্যবস্থাপনা শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
ব্যবস্থাপনার ক্লাসিক্যাল ও নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব উভয়ই ব্যবস্থাপনার মূলনীতি ও ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। তবে এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব
- ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য: ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের লক্ষ্য হলো উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও লাভের সর্বোচ্চকরণ।
- ব্যবস্থাপনার ভূমিকা: ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব অনুসারে, ব্যবস্থাপকের ভূমিকা হলো কর্মীদের কাজের নির্দেশনা দেওয়া, তাদের কাজের তদারকি করা ও তাদের কাজের ফল মূল্যায়ন করা।
- ব্যবস্থাপনার নীতি: ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো:
- বিভাজনের নীতি: কাজকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করা।
- কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের নীতি: প্রত্যেক কর্মীর উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব অর্পণ করা।
- নিয়ন্ত্রণের নীতি: কর্মীদের কাজের ফল পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব
- ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য: নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্বের লক্ষ্য হলো উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, লাভের সর্বোচ্চকরণ ও কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন।
- ব্যবস্থাপনার ভূমিকা: নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব অনুসারে, ব্যবস্থাপকের ভূমিকা হলো:
- **কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা।
- **কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা।
- **কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
- ব্যবস্থাপনার নীতি: নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো:
- কর্মীদের অংশগ্রহণের নীতি: কর্মীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করা।
- মানব সম্পর্ক নীতি: কর্মীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ক্লাসিক্যাল ও নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব | নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব |
---|---|---|
ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য | উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও লাভের সর্বোচ্চকরণ | উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, লাভের সর্বোচ্চকরণ ও কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন |
ব্যবস্থাপনার ভূমিকা | কর্মীদের কাজের নির্দেশনা দেওয়া, তাদের কাজের তদারকি করা ও তাদের কাজের ফল মূল্যায়ন করা | কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা, কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা |
ব্যবস্থাপনার নীতি | বিভাজনের নীতি, কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের নীতি, নিয়ন্ত্রণের নীতি | কর্মীদের অংশগ্রহণের নীতি, মানব সম্পর্ক নীতি |
উপসংহার
ক্লাসিক্যাল ও নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব উভয়ই ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে উঠেছিল এবং এটি ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক নীতি ও ধারণাগুলোর উপর আলোকপাত করে। নিওক্লাসিক্যাল তত্ত্ব ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং এটি ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন ও কর্মীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়।