অথবা, কুর্নট মডেল চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রারম্ভিক কথা: প্রখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ অগাস্টিন কুর্নট (Augustine Cournot) ১৮৩৮ সালে ডুয়োপলি বাজারে ফার্মের ভারসাম্য ব্যাখ্যা করার জন্য একটি মডেল গড়ে তোলেন। তার নামানুসারে এ মডেলের নামকরণ করা হয় কুর্নট মডেল।
পরবর্তীকালে অর্থনীতিবিদগণ তার মডেলকে প্রতিক্রিয়া রেখার সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন। ডুয়োপলিবাজারে শিল্পের অন্তর্ভুক্ত ফার্মগুলো পরস্পরের উৎপাদন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে। যে রেখার মাধ্যমে এ প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় তাকে প্রতিক্রিয়া রেখা বলে। প্রতিক্রিয়া রেখার মাধ্যমে কুর্নট মডেল ব্যাখ্যা করা যায়। অনুমিতসমূহ (Assumptions): কুর্নট মডেল নিম্নোক্ত অনুমিতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।
- (১) বাজারে A ও B দুটি ফার্ম বিদ্যমান। (২) প্রতিটি ফার্মের উৎপাদন ব্যয় শূন্য।
( ৩) প্রতিটি ফার্মের পণ্য সমজাতীয়।
( ৪) চাহিদা রেখা ডান দিকে নিম্নগামী এবং সরলাকৃতির।
(৫) প্রতিদ্বন্দ্বি ফার্মের উৎপাদন স্থির থাকবে।
( ৬) বাজার চাহিদা সম্পর্কে উভয় ফার্মের সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে । চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যাঃ কুর্নট মডেলের মূল বক্তব্য প্রতিক্রিয়া রেখার সাহায্যে ডুয়োপলি বাজারের ভারসাম্য অবস্থান ব্যাখ্যা করা যায়।
নিচের চিত্রে, OX অক্ষে A ফার্মের উৎপাদন ও OY অক্ষে B ফার্মের উৎপাদন নির্দেশ করা হয়েছে। RR = A ফার্মের প্রতিক্রিয়া রেখা নির্দেশ করে।
RaRa = B ফার্মের প্রতিক্রিয়া রেখা নির্দেশ করে।
A ফার্মের প্রতিক্রিয়া রেখা দ্বারা । ফার্মের উৎপাদনের বিপরীতে এ ফার্মের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। আবার, ৪ ফার্মের প্রতিক্রিয়া রেখা দ্বারা A ফার্মের উৎপাদনের বিপরীতে ৪ ফার্মের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।
মনে করি, A ফার্ম ORA পরিমান উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। A ফার্মের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে । ফার্ম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং H বিন্দুতে HR, পরিমাণ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ ফার্মের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে A ফার্ম প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এবং । বিন্দুতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে উৎপাদন । ফার্মের ON A ফার্মের সিদ্ধান্তের দ্বারা । ফার্ম পুনরায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং ( বিন্দুতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে উৎপাদনের পরিমাণ OM,
এভাবে দুটি প্রতিক্রিয়া রেখা ধরে প্রতিক্রিয়া বিন্দুর স্থানান্তর চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সমন্বয় প্রক্রিয়া। বিন্দুতে এসে শেষ হয় যেখানে দুটি প্রতিক্রিয়া রেখা পরস্পরকে ছেদ করে। E বিন্দু হল ভারসাম্য বিন্দু যেখানে উভয় ফার্ম সহাবস্থান করে।
E বিন্দুতে A ফার্মের উৎপাদনের পরিমাণ ON, এবং B ফার্মের উৎপাদনের পরিমাণ OM।
সমালোচনাঃ কুর্নট মডেলের সমালোচনা বা সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপ:
এভাবে প্রতিক্রিয়া রেখার মাধ্যমে পারস্পারিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ডুয়োপলি বাজারে ভারসাম্য অর্জিত হয়।
১. শূন্য উৎপাদন ব্যয়ঃ কুটি মডেলে উৎপাদন ব্যয় শূন্য বিবেচনা করা হয়েছে, বাস্তবে এটি সঠিক নয়।
২. স্থির মডেল: কুর্নট মডেলটি একটি স্থির মডেল হিসেবে বিবেচিত। গতিশীল অবস্থায় কুটি মডেল গ্রহণযোগ্য নয়।
৩. উৎপাদনের পরিমাণ স্থিরঃ এই মডেলে ধরে নেওয়া হয়েছে প্রতিযনি ফার্মের উৎপাদন সব সময় স্থির থাকবে। কিন্তু এ অনুমান বাস্তব সম্মত নয়।
৪. ফার্মের প্রবেশ নিষিদ্ধ: এই মডেলে অনুমিত দুটি ফার্ম ছাড়া অন্যকোন ফার্ম প্রবেশ করতে পারে না। কেবল দুটি ফার্ম নিয়ে এ মডেল গঠিত। এই মডেলকে বন্ধ মডেল বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৫. প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব নয়: এ মডেলে ধরে নেওয়া হয়েছে একটি ফার্ম তার প্রতিযোগীর প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে অনুমান করতে পারে। বাস্তবে এটা সঠিক নয়।
৬. ডুয়োপলির আচরণ উপেক্ষিত: ডুয়োপলি অলিগোপলির একটি বিশেষ রূপ। অলিগোপলি বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিযোগী ফার্মগুলো উৎপাদন ও দাম নির্ধারণ করে। কিন্তু কুটি মডেলে ডুয়োপলি ফার্মের আচরণ ব্যাখ্যায় এ বৈশিষ্ট্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে।।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কিছু কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ডুয়োপলি বাজারে ভারসাম্য অবস্থা বিশ্লেষণে কুর্নট মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।