হয় অথবা, ষড়যন্ত্রমূলক অলিগোপলি কি? এরূপ বাজারে কিভাবে উৎপাদনের পরিমান ও দাম নির্ধারিত হয় আলোচনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: অলিগোপলি বাজারে প্রতিযোগী ফার্মসমূহ নিজেদের একচেটিয়া মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা পরিহার করার কথা চিন্তা করতে পারে। বিক্রয়ের পরিমান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তথা মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফার্মসমূহ নিজেদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী নানা পন্থা অবলম্বন করতে পারে। লক্ষ্য করা গেছে অলিগোপলি বাজারে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কারণে দাম এবং উৎপাদন নির্ধারণে কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই দাম নির্ধারণে অনিশ্চয়তা এবং পরস্পরিক নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ফার্মসমূহ নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। এ অবস্থাকে যোগ সাজসী অলিগোপলি (Collusive Oligopoly) বলা হয়।
উল্লেখ্য Collusive শব্দের অর্থ এক ধরনের ফন্দি-ফিকির বা ষড়যন্ত্র। অর্থাৎ ক্রেতা সাধারণকে ঠকিয়ে মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে সীমিত সংখ্যক বিক্রেতাগণ বাজারে নিজেদের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতামূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
অবস্থাকে সমঝোতামূলক বা ষড়যন্ত্রমূলক অলিগোপলি (Collusive Oligopoly) বলা হয়। ষড়যন্ত্রমূলক অলিগোপলির উদাহরণ হিসেবে কার্টেলের কথা উল্লেখ করা যায়।
যোগসাজসী অলিগোপলি বা কার্টেলের অধীনে ভারসাম্য: অলিগোপলি বাজারে ফার্মসমূহ দাম ও উৎপাদনের পরিমান নির্ধারনের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে জোটবদ্ধ হতে পারে। একে কার্টেল বলে।
কার্টেল দুই ধরনের হতে পারে। যেমন-
১. কেন্দ্রিভূত কার্টেল
২. বাজারের অংশীদারিত্ব কার্টেল
১. কেন্দ্রিভূত কার্টেল: অলিগোপলি বাজারে শিল্পের অন্তর্ভুক্ত ফার্মসমূহের উৎপাদিত দ্রব্যের দাম এবং উৎপাদনের পরিমান কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হলে তাকে কেন্দ্রিভূত কার্টেল বলে। নিম্নে কেন্দ্রিভূত কাটেলের অধীনে বিভিন্ন ফার্মের ভারসাম্য দামও উৎপাদনের পরিমান নির্ধারণ করা হলঃ
ভারসাম্যের শর্তঃ কেন্দ্রিভূত কার্টেলের অধীনে ভারসাম্য দাম ও উৎপাদনের পরিমান নির্ধারণে নিম্নোক্ত শর্তাদি পালিত হতে হয়।
(ক) সদস্য ফার্মগুলোর মোট প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় পরস্পর সমান হবে। অর্থাৎ MR = MC (খ) প্রতিটি ফার্মের প্রান্তিক ব্যয় সমান হবে। MC, MC এবং ভারসাম্য বিন্দুতে MC, MC = MR হবে।
চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যাঃ নিম্নে চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো:-
চিত্রে A ও B দুটি ফার্ম দ্বারা গঠিত কার্টেলের ভারসাম্য অবস্থা দেখানো হল। OX অক্ষে উৎপাদনের পরিমান ও OY অক্ষে দাম আয়, খরচ পরিমাপ করা হল। MC = MC + MC রেখা A ও B ফার্মের প্রান্তিক খরচ এর সমষ্টি নির্দেশ করে। DD-= চাহিদা রেখা। MR = কার্টেলের প্রান্তিক আয় রেখা। আবার MC, এবং MC, রেখা যথাক্রমে A ফার্মের প্রান্তিক খরচ ও B ফার্মের প্রান্তিক খরচ নির্দেশ করে। চিত্রানুযায়ী MC রেখা MR রেখাকে E বিন্দুতে ছেদ করে ফলে E বিন্দুতে MR = MC E বিন্দু অনুযায়ী, ভারসাম্য উৎপাদনের পরিমান OM। ভারসাম্য দাম হল OPI এখন E বিন্দু থেকে উলম্ব অক্ষের সাথে ES লম্ব টানি। এক্ষেত্রে MC, এবং MC রেখা যথাক্রমে ৫ ও H বিন্দুতে ছেদ করে। G ও H অনুযায়ী- A ফার্মের উৎপাদনের পরিমান OM, ও B ফার্মের উৎপাদনের পরিমান OM, সুতরাং A ও B ফার্মের উৎপাদনের পরিমান (OM,+ OM₂) = OM যা কার্টেলের মোট উৎপাদনের পরিমান নির্দেশ করে। এ স্তরে প্রতিটি ফার্মের প্রান্তিক খরচ পরস্পর সমান। অর্থাৎ MCA = MC হয়। চিত্রানুযায়ী প্রতিটি কার্যের উৎপাদিত দ্রব্য OP দামে বিক্রয় হয়।
উপসংহারঃ উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি অলিগোপলি বাজারে বিক্রেতারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা পরিহার করার লক্ষ্যে সরাসরি বা গোপনে যে চুক্তি সম্পন্ন করে তাকেই বলা হয় যোগসাজসী অলিগোপলি বলে।