অলিগোপলিতে কিভাবে ভারসাম্য নির্ধারিত হয়-ব্যাখ্যা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, অলিগোপলি বাজারে বাজার ভারসাম্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : প্রারম্ভিক কথাঃ অলিগোপলিতে ফার্মের ভারসাম্য তথা উৎপাদনের পরিমাণ ও দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় তা অলিগোপলির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। দ্রব্যের প্রকৃতি ও দাম নেতৃত্বের দিক বিবেচনা করলে অলিগোপলি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। তবে অলিগোপলিতে ভারসাম্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট কোন মডেল নেই। নিম্নে দ্রব্যের প্রকৃতি ও দাম এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারসাম্য আলোচনা করা হল। তাহল-

১. বিশুদ্ধ অলিগোপলির ভারসাম্য;

২. পৃথকীকরণ অলিগোপলিতে ভারসাম্য;

৩. দাম নেতৃত্ব অলিগোপলি।

নিম্নে এদের ভারসাম্য আলোচনা করা হলঃ

১. বিশুদ্ধ অলিগোপলির ভারসাম্যঃ বিশুদ্ধ অলিগোপলিতে বিক্রেতারা সমজাতীয় পণ্য বিক্রি করে। একক ভাবে কেউ দাম বাড়তে বা কমাতে পারে না। কারণ, কোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ালে সব ক্রেতা অন্য প্রতিযোগি বা বিক্রেতার কাছে চলে যাবে। আবার দাম কমালে প্রতিযোগি ফার্মগুলোও দাম কমাবে। এ অবস্থায় ফার্ম নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে। কারণ, এই অবস্থায় উৎপাদন থাকে সীমিত এবং দাম প্রান্তিক ব্যয়ের চেয়ে বেশী হয়। তবে ফার্মগুলো সমঝোতা করতে ব্যর্থ হলে প্রতিযোগিতার কারণে শেষ পর্যন্ত দাম কমে নিম্নতম গড় ব্যয়ের সমান হবে। এ অবস্থায় সকল ফার্ম স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করবে। ফলে এখানে দাম নির্ধারিত হবে সে বিন্দুতে সেখানে গড় ব্যয় ও গড় আয় পরস্পর সমান হবে। অর্থাৎ P = AC = AR. চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা ও নিম্নে চিত্রের সাহায্যে বিশুদ্ধ অলিগোপলির ভারসামায় দেখানো হল।

চিত্রে, OY অক্ষে দ্রব্যের দাম ও ব্যয় এবং OX অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ নির্দেশ করছে। AR হল গড় আয় রেখা এবং AC গড় ব্যয় রেখা।

বিশুদ্ধ অলিগোপলিতে ফার্মগুলো সমজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করে বলে দামের উপর কোন ফার্ম একক ভাবে প্রভাব বিস্ত ার করতে পারে না। ফলে গড় আয় (AR) রেখা ভূমি অক্ষের সমান্তরাল হয়। চিত্রে, AR রেখা গড় ব্যয় রেখা AC এর সর্ব নিম্ন বিন্দু E তে স্পর্শক হয়েছে। ফলে ভারসাম্য বিন্দু E। E বিন্দুতে ভারসাম্য দাম OP ও ভারসাম্য উৎপাদন OM এবং E বিন্দুতে AR=AC এখানে,

মোট আয় = OMEP,

মোট ব্যয় = OMEΕΡ.

মুনাফা = OMEP-OMEP = 0

অর্থাৎ বিশুদ্ধ অলিগোপলিতে ফার্ম স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করতে পারে।

২. পৃথকীকরণ অলিগোপলিতে ভারসাম্যঃ পৃথকীকৃত অলিগোপলিতে বিভিন্ন ফার্মের দ্রব্য সমজাতীয় না হয়ে কিছুটা পৃথক হয়ে থাকে। ফলে প্রত্যেক ফার্ম বা বিক্রেতা তার দ্রব্যের দামের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

পৃথকীকৃত অলিগোপলিতে গড় আয় (AR) রেখা বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়। এ বাজারে দ্রব্যগুলো সমজাতীয় না হলেও সদৃশ এবং এরা একে অপরের ঘনিষ্ট বিকল্প। তাই বিভিন্ন বিক্রেতার মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকে। ফলে স্বল্পকালে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হলেও দীর্ঘকালে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে।

এখানে ভারসাম্য বিন্দুতে P = AC = AR হবে। চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যাঃ নিম্নে পৃথকীকৃত অলিগোপলিতে চিত্রের সাহায্যে ভারসাম্য দেখানো হলঃ

চিত্রে, OX অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ ও OY অক্ষে দাম ও ব্যয় নির্দেশ করছে। AR গড় আয় রেখা এবং AC হল গড় ব্যয় রেখা। চিত্রে, AC রেখা AR রেখার সাথে E বিন্দুতে AC = AR এবং ভারসাম্য দান OP ও পরিমাণ OM নির্ধারিত হয়।। এভাবে পৃথকীকৃত অলিগোপলিতে ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

৩. দাম নেতৃত্ব অলিগোপলিতে ভারসাম্য। দাম নেতৃত্ব অলিগোপলিতে এর অন্তঃভূক্ত ফার্মসমূহের মধ্যে বৃহৎ ও প্রাধান্য বিস্তারকারী ফার্ম যে দামে তার পণ্য বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অন্যান্য ফার্মগুলো তাই মেনে নেয়। তবে এখানে কিছু অনুমিত শর্ত কাজ করে।

শর্তসমূহ ঃ

১. বাজারে A এবং B দুটি ফার্ম রয়েছে।

২. A ও B উভয়ই সমজাতীয় পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে।

৩. বাজারটি দুটি ফার্মের মধ্যেই সমানভাবে বিভক্ত।

  1. A ফার্মের চেয়ে B ফার্মের উৎপাদন খরচ কম।

৫. উভয় ফার্মের চাহিদা অপেক্ষক (AR ও MR) একই রকম।

চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যাঃ নিম্নে দাম নেতৃত্ব অলিগোপলির ভারসাম্য আলোচনা কর।

চিত্রে, OY অক্ষে দ্রব্যের দাম ও ব্যয় এবং OX অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ নির্দেশ করছে। ফার্ম দুটির পণ্য সমজাতীয় বলে তারা একযোগে পণ্যটির মোট চাহিদার সম্মুখীন হয়।

চিত্রে, ARA = AR₁ = D তাদের প্রত্যেকের চাহিদা রেখা। একই ভাবে MRA-MR, হল প্রত্যেকের প্রান্তিক আয় রেখা।

MC, হল A ফার্মের প্রান্তিক ব্যয় রেখা। MC, হল । ফার্মের প্রান্তিক ব্যয় রেখা। A ফার্মের প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক

ব্যয় E বিন্দুতে সমান। B ফার্মের প্রান্তিক আয় ও ব্যয়। বিন্দুতে সমান।

ফলে, A ফার্মের ভারসাম্য দাম OP, ও ভারসাম্য উৎপাদন OM, পরিমাণ।

চিত্র মতে, A ফার্মের তুলনায় B ফার্মের দাম কম ও উৎপাদন বেশী। এখন B ফার্ম OP = PA অনুযায়ী পণ্য বিক্রয় শুরু করবে এবং নিজস্ব ভারসাম্য OM, ছেড়ে দিয়ে, B ফার্মের OM পরিমান উৎপাদন করবে। এ ক্ষেত্রে B ফার্মের তুলনায় A ফার্মের মুনাফা কম হবে। B ফার্ম অধিক দক্ষ হওয়ায় A ফার্ম B ফার্মের সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এবং বাজার দাম নির্ধারিত হয় ৪ ফার্মের সিদ্ধান্ত মতে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, অলিগোপলিতে ভারসাম্য নির্ধারিত হয় এর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে এবং এর মুনাফাও সময় সাপেক্ষে ভিন্ন ধরনের হয়।