উপনিষেদ শব্দের অর্থ হলো “নিকটে বসানো” বা “গুহ্যজ্ঞান”। উপনিষদ হলো হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থসমূহে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, উপনিষদ্গুলোতে সর্বোচ্চ সত্য স্রষ্টা বা ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে।
উপনিষদ শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দের সমন্বয়ে গঠিত: উপ + নি + ষদ। “উপ” শব্দের অর্থ হলো “নিকটে”, “নি” শব্দের অর্থ হলো “নিয়ে আসা” এবং “ষদ” শব্দের অর্থ হলো “বসানো”। সুতরাং, উপনিষদ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো “নিকটে বসানো”। এই অর্থে, উপনিষদ বলতে এমন একটি গ্রন্থকে বোঝায় যা একজন গুরু তার শিষ্যকে নিকটে বসিয়ে তার কাছে শিক্ষা দেন।
উপনিষদের অপর একটি অর্থ হলো “গুহ্যজ্ঞান”। এই অর্থে, উপনিষদ বলতে এমন একটি গ্রন্থকে বোঝায় যাতে গোপন বা গুহ্য জ্ঞান রয়েছে। এই জ্ঞান সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ নয়, কেবলমাত্র গুরু-শিষ্য পরম্পরায় দীক্ষিত ব্যক্তিদের জন্যই এটি উপলব্ধ।
উপনিষদগুলি মূলত বেদ- পরবর্তী ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায়। এগুলো প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীকালে এগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়।
উপনিষদগুলির সংখ্যা অনির্দিষ্ট, তবে তেরোটি উপনিষদ প্রধান ও প্রাচীন বলে স্বীকৃত। সেগুলি হলো:
- (ঋগ্বেদের) ঐতরেয়, কৌশীতকি
- (সামবেদের) ছান্দোগ্য, কেন
- (কৃষ্ণ যজুর্বেদের) তৈত্তিরীয়, কঠ, শ্বেতাশ্বতর, মৈত্রায়ণীয়
- (শুক্ল যজুর্বেদের) বৃহদারণ্যক, ঈশ
- (অথর্ববেদের) মুন্ডক, প্রশ্ন এবং মান্ডূক্য
উপনিষদগুলির বিষয়বস্তু অত্যন্ত ব্যাপক। এগুলিতে ব্রহ্মের প্রকৃতি, আত্মার প্রকৃতি, মোক্ষের পথ, যোগ, বেদান্ত দর্শন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উপনিষদগুলি হিন্দুধর্মের দর্শন ও ধর্মীয় চিন্তার বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।