মাৎস্যন্যায় হলো একটি সংস্কৃত শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ “মাছের ন্যায়”। মাছেদের জগতে যেমন বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, তেমনি মানবসমাজে শক্তিশালীরা দুর্বলদের শোষণ করে। এই ধরনের অরাজক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে মাৎস্যন্যায় বলা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে, মাৎস্যন্যায় শব্দটি বাংলার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শশাঙ্কের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এই সময়টাতে কোনো শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না। ফলে বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য গড়ে ওঠে। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকত। দুর্বলরা সবলদের হাতে শোষিত হতো। এই অরাজক অবস্থাকেই মাৎস্যন্যায় বলা হয়।
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের রাজত্বকালে (৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দ) মাৎস্যন্যায়ের অবসান ঘটে। গোপাল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে বাংলায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন।
বর্তমানে মাৎস্যন্যায় শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্নীতি ও অনিয়ম বৃদ্ধি পেলে সেই অবস্থাকে মাৎস্যন্যায়ের সাথে তুলনা করা হয়।