অথবা, ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
অথবা, ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে প্রধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিরাজ করছে। যথা- পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র। কিন্তু এই দুটি মতবাদ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ায় বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামী অর্থব্যবস্থা আজকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় মতবাদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
নীচে পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে:পুঁজিবাদ একটি খুব সাধারণ এবং বেশ জনপ্রিয় আর্থিক ব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এ ধরনের আর্থিক ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এই আর্থিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
১. ব্যক্তিগত সম্পত্তি: পুঁজিবাদী আর্থিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা। অর্থাৎ জমি,
কারখানার যন্ত্রপাতি, উৎপাদন উপকরণ ইত্যাদি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃত। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সম্পত্তির অবাধ দখল, হস্তান্তর এবং উত্তরাধিকার ভোগ করে।
২. ভোক্তা সার্বভৌমত্ব: পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে প্রত্যেক ভোক্তা তার নিজের ক্ষমতা, রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো পণ্য যেকোনো পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে। উৎপাদক ভোক্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের পরিমাণ ও সরবরাহ নির্ধারণ করে।
৩. উদ্যোগের স্বাধীনতা: একটি পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে, প্রতিটি ভোক্তা তার নিজের ক্ষমতা, স্বাদ এবং পছন্দ অনুসারে যে কোনও পরিমাণে যে কোনও পণ্য গ্রহণ করতে পারে। উৎপাদক ভোক্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের পরিমাণ ও সরবরাহ নির্ধারণ করে।
৪. সমাজে শ্রেণী বিভক্তি: সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা থাকার কারণে এখানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিক্ত প্রভৃতি শ্রেণীর উদ্ভব হয়। এরূপ সমাজে উচ্চবিত্তগণ শোষক এবং নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তগণ দিন দিন দরিদ্র থেকে হতদরিদ্রে পরিণত হয়।
৫. অবাধ প্রতিযোগিতা: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সকল ক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে এরূপ প্রতিযোগিতার ফলে’ নতুন আবিষ্কার সম্ভব হয়, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। দাম নির্ধারণেও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকে।
৬. মুনাফা অর্জন : ধনতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন পরিচালনা। ধনতন্ত্রের প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। এবং প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগ করা। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার। উৎপাদন কারীরা সমাজিক কল্যাণের দিক লক্ষ্য করে মুনাফা অর্জন করে।
৭. বৃহদায়কত উৎপাদন ব্যবস্থাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থ-ব্যবস্থায় বৃহদাকার যন্ত্রচালিত শিল্পকারখানার বিকাশ ঘটে। ১৭৫০ সাল থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডে’ শিল্প বিপ্লব’ ধনতন্ত্রের অবদান। পরবর্তীতে ইউরোপ ও অন্যান্য মহাদেশে এর প্রভাবে বৈজ্ঞানিক, কারিগরি, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতির অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়।
৮. মূলধন রপ্তানি: ধনতন্ত্রে যখন নিজ দেশে আর বিনিয়োগের ক্ষেত্র পায় না, পুজিপদিগণ তখন বিদেশে বিনিয়োগ করে মুনাফার পরিমান বৃদ্ধির জন্য মূলধন রপ্তানি করে। বাংলাদেশেরও বর্তমানে উন্নত দেশসমূহের পুঁজিপতিগণ বিনিয়োগ করার লক্ষ্যে মূলধন রপ্তানি করেছে।
৯. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়ঃ ধনতান্ত্রিব অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের সাথে যথেষ্ট ঝুঁকি জড়িত থাকে বলে উৎপাদনকারী। ব্যবসা বা উৎপাদন পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যববহার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মিতব্যায়িতার পরিচয় দেয়া হয়। এর ফলে সম্পদের অপচয় কম হয় এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
১০. সামাজিক শ্রমবিভাগের সর্বোচ্চকরণ: পুঁজিপতিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সম্প্রসারণ উৎপাদন কৌশলের উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য উৎপাদন প্রণালীতে সামাজিক শ্রম বিভাগের সর্বোচ্চকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ সমস্ত উৎপাদনে মধ্যে সমাজের অংশ গ্রহন থাকে।
১১. উৎপাদন ও পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ: ধনতন্ত্রে পুঁজিপুতরা উৎপাদনের উদ্বৃত্তের মালিক। শ্রমিকদের শোষন করে দিন দিন তারা পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ করে। উৎপাদন ও পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণের মাধ্যমে দিন দিন তাদের সম্পদের পরিমান বৃদ্ধি পায়।
১২. শিল্প পুঁজির সাথে ব্যাংক পুজির সমন্বয়: পুঁজিপতিগণ ব্যাংক পুঁজির সাহায্য পায় বিনিয়োগ বা উৎপাদন ক্ষেত্রে। এ জন্য বৃহদায়তন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা তাদের পক্ষে সহজ। এক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব পুঁজি ও ব্যাংক। পুঁজির মিশ্রনে বৃহৎ বিনিয়োগ তহবিল গঠিত হয়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টা ব্যক্তিগত কর্ম উদ্যেগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে, মুনাফার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। সেখানে চাহিদা, যোগান ও দাম বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।