কেবিনেট ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতিসমূহ আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, কেবিনেট ব্যবস্থার প্রকৃতি আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ব্রিটিশ কেবিনেট শাসনব্যবস্থা দীর্ঘকাল বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় কেবিনেট ব্যবস্থার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সুদীর্ঘ ক্রমবিবর্তনের ফল হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ব্রিটিশ কেবিনেটে একনায়কতন্ত্র পরিলক্ষিত হয়, অর্থাৎ কেবিনেটই সকল নীতিনির্ধারণ করে। আর কেবিনেটের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। কেবিনেটের সকল কার্যাবলিই প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়।

কেবিনেট ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতিসমূহ: ব্রিটিশ কেবিনেটের কতকগুলো তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে এগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।

১. আনুষ্ঠানিক শাসক প্রধান: ব্রিটিশ কেবিনেট এর শাসনব্যবস্থার শীর্ষে আছেন রাজা বা রাণী। কিন্তু তিনি নামমাত্র শাসক। শাসনকার্যের প্রকৃত দায়িত্ব কেবিনেটের উপর ন্যস্ত আছে। রাজা বা রাণী হলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসক।

২. সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীতি: নির্বাচনের পর যে দল কমন্সসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সে দলই মন্ত্রিপরিষদ বা কেবিনেট গঠন করে। সে দলের নেতাকে রাজা বা রাণী মন্ত্রিসভা গঠন করার জন্য আহ্বান জানান।

৩. কেবিনেট সদস্যরা পার্লামেন্টের: সদস্য কেবিনেট পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কেবিনেট সদস্যদের পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়। পার্লামেন্টের সদস্য না হয়েও কোন ব্যক্তি কেবিনেটের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন।তবে এরকম ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে ছয় মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের সদস্য পদ অর্জন করতে হয়।

৪. প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কেবিনেটের গঠন নিয়ন্ত্রণ: প্রধানমন্ত্রী কেবিনেটের গঠন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। মন্ত্রিসভার কোন কোন সদস্যকে কেবিনেটের মন্ত্রী করা হবে এবং কোন কোন দৃপ্তর কেবিনেটের অন্তর্ভুক্ত হবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত।

৫. আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক: কেবিনেট এর সদস্যরা পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে নিবিড় ও সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কেবিনেট পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যের আস্থা ও সমর্থন লাভ করে।

৬. দলীয় ব্যবস্থা: ব্রিটেনের কেবিনেট শাসনব্যবস্থা হল মূলত দলীয় শাসনব্যবস্থা। কেবিনেট গঠিত হয় পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে। একইভাবে কেবিনেট ব্যবস্থায় মূলত একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। র্যামজে মুর বলেছেন, “Party spirit supplies the driving force for the whole machine.”

৭. ব্যক্তিগত ও যৌথ দায়িত্বশীলতা: ব্রিটেনের কেবিনেট শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সরকারি নীতি ও শাসন পরিচালনার জন্য কমন্সসভার কাছে কেবিনেটের দায়িত্বশীলতা। কেবিনেটের এ দায়িত্বশীলতা দ্বিবিধ ব্যক্তিগত এবং যৌথ। প্রতিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিগণকে বিভাগীয় কাজকর্মের জন্য কমন্সসভার কাছে ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহি করতে হয়। আবার যৌথ দায়িত্বের নীতি অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনায় কোন ত্রুটির জন্য সামগ্রিকভাবে কেবিনেটকেই দায়িত্ব বহন করতে হয়।

৮. ঐক্য ও সংহতি: কেবিনেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর সুদৃঢ় ঐক্য ও সংহতি। কমন্সসভার কাছে যৌথ দায়িত্বশীলতার জন্য মন্ত্রীদের মধ্যে ঐক্য ও সংহিত অপরিহার্য। মন্ত্রীদের মধ্যে সরকারি নীতি সম্পর্কে ঐকমত্য না থাকলে কেবিনেট যৌথ দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

৯. গোপনীয়তা রক্ষা: কেবিনেট বৈঠকের গোপনীয়তা রক্ষা করা কেবিনেটের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রিতি কাউন্সিলের কাছে মন্ত্রীদের গোপনীয়তা রক্ষা করার শপথ নিতে হয়। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং কূটনৈতিক প্রয়োজনে এ গোপনীয়তা রক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

১০. প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য: কেবিনেট শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও প্রাধান্য বিদ্যমান। কে. সি. হোয়ার এর মতানুসারে, “তত্ত্বগত বিচারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেও কার্যত তিনি হলেন
শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ও চালিকাশক্তি।”

১১. কমলসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী: কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকেই ব্রিটেনের রাজা বা রাণী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। এটিই কেবিনেট প্রথার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তবে কমন্সসভায় কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাজা বা রাণী খুশিমতো প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করতে পারেন।

উপসংহার: উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্রিটিশ প্রশাসন ব্যবস্থার প্রধান কর্ণধার হচ্ছে কেবিনেট। সরকারের নেতৃত্বদান হতে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে কেবিনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ ব্রিটিশ কেবিনেট হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণকারী সংস্থা। ফলে সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার যাবতীয় দায়দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে কেবিনেটের উপর বর্তায়। অধ্যাপক বেজহটের মতে, “কেবিনেট হচ্ছে একটি সংযোগ স্থাপনকারী সংস্থা, এটি আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে যোগসূত্র সংস্থাপন করে।”