অথবা, বিদলীয় ব্যবহার সুফল আলোচনা কর।
অথবা, দিলীয় ব্যবস্থার সুবিধা আলোচনা কর।
অথবা, বিদলীয় ব্যবস্থার ইতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : যে ব্যবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য মূলত দুটি সর্ববৃহৎ দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে তাকে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যায়। নির্বাচনের মাধ্যমে এ ধরনের দল ব্যবস্থায় একটি দল সরকার গঠন করে এবং অপরটি বিরোধীদলীয় ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দিলীয় ব্যবস্থায় অনেক গুণাগুণ লক্ষ্য করা যায়।
দিদলীয় ব্যবস্থার গুণসমূহ : একদলীয় শাসনব্যবস্থার ন্যায় বিলীয় ব্যবস্থারও বেশকিছু গুণাবলি রয়েছে। নিম্নে দ্বিদলীয় ব্যবস্থার গুণাবলি আলোচনা করা হলো :
১. বিরোধী দলের ভূমিকা : দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় যে দল নির্বাচনে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, সে দল একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে সরকারি কার্যকলাপের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে। এর ফলে কার্যকরীভাবে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিরোধ করা যায়। আবার আইনসভার অধিকাংশ সদস্যের অনাস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দল পদচ্যুত হলে, বিরোধী দল সাথে সাথে সরকার গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। অধ্যাপক লাস্কি (Laski) বলেছেন, “It makes known and intelligible the result of its failure. It brings an alternative govemment into immediate beings.”
২. জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ: ছিলীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারি দল এবং বিরোধী দল নিজেদের স্বতন্ত্র দায়িত্বের ব্যাপারে জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থাকে। তাই জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে উভয় দলকেই সতর্ক থাকতে হয়। আর ফলে কোন দলের মধ্যেই ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত বা দলগত কোনরকমই সংকীর্ণতা বা স্বার্থপরতার সুযোগ থাকে না।
৩. স্বৈরাচারিতার সম্ভাবনা কম : দিলীয় ব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে, ফলে সরকার স্বীয় ইচ্ছামতো দেশ শাসন করতে পারে না। নীতি বিচ্যুত হলে প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাতে দেশে স্বৈরশাসন বিকাশের সম্ভাবনা কম থাকে।
৪. সরকারের স্থায়িত্ব : দিলীয় ব্যবস্থা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী। দেশে দু’টি রাজনৈতিক দল থাকলে একটি দল নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে এবং দৃঢ় ও শক্তিশালী সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। ফলে স্থায়িত্বের ব্যাপারে নিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় এবং ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার জনগণের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণসাধনে আত্মনিয়োগ করতে পারে।
৫. নীতি ও প্রার্থী বাছাইয়ের সুবিধা : দ্বিদলীয় ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দু’টি বিকল্প নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে দু’টি দলের মনোনীত প্রর্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এর ফলে নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষে নীতিনির্ধারণ ও প্রার্থী নির্বাচন করা সহজতর হয়। বার্কার (Barker) বলেছেন, “The citizen will choose most freely when he has clear choise between two alternatives.”
৬. শাসনকার্যের উৎকর্ষতা: ছিলীয় ব্যবস্থায় শাসনকার্যের উৎকর্ষতা বিধান সম্ভব। দু’টি দল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে
দেশ চালায়। এতে জনসাধারণের কল্যাণ দ্রুত ত্বরান্বিত হয়।
৭. অর্থনৈতিক বিকাশ : দিলীয় ব্যবস্থায় দু’টি বৃহৎ দল তাদের সাফল্যের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর সর্বাধিক
গুরুত্বারোপ করে। এতে দেশের অর্থনীতির দ্রুত প্রসার ঘটে। সরকার বা বিরোধী দল উভয়ই দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এমন কোন কাজে লিপ্ত হয় না। কেননা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা পরবর্তী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে।
৮.জনমত গঠন সহজ: এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণ দু’টি দলের কাজের মূল্যায়ন খুব স্বল্পসময়ের মধ্যেই করতে সক্ষম হয়। ফলে সরকার ও বিরোধী দলের সাফল্য-অসাফল্য অনুসারে জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে সহজেই তাদের রায় প্রদান করতে পারে।
৯, পরিচালনার সুবিধা : দ্বিতীয় ব্যবস্থায় সরকার পরিচালনা সহজতর হয়। একটি দল সরকার গঠন করে এবং অন্যটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে নাই পরিচালনার জটিলতা কম হয়। দু’টি দলই তাদের উত্থাপিত যুক্তিগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে সম্পাদন করতে নিপীয় ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। দিলীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকর থাকলে সরকার কখনো স্বৈরাচারী রূপ ধারণ করতে পারে না।