একদলীয় ব্যবস্থার গুণাবলি আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, একদলীয় ব্যবহার সুফল আলোচনা কর।
অথবা, একদলীয় ব্যবহার সুবিধা আলোচনা কর।
অথবা, একদলীয় ব্যবস্থার ইতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা : কোন রাষ্ট্রে যখন একটি মাত্র দল বিরাজিত থাকে তখন তাকে একদলীয় শাসন বলা হয়। দেশের এ একমাত্র দলটি তার আদর্শ, নীতি এ কর্মসূচি অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে। স্পেন, কেমিয়া ইত্যাদি দেশে একদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। একদলীয় শাসনব্যবস্থায় অনেক দোষত্রুটি বিদ্যমান থাকলেও এ শাসনব্যবস্থ কিছু কিছু গুণও রয়েছে।

একদলীয় ব্যবস্থার গুণাবলি : একদলীয় শাসনব্যবস্থার অনেক দোষত্রুটি বিদ্যমান থাকলেও এ শাসনব্যবস্থার কিছু কিছু গুণও রয়েছে। নিম্নে একদলীয় শাসনব্যবস্থার গুণসমূহ আলোচনা করা হলো।

১. জাতীয় ঐক্য ও সংহতি : সারাদেশে একটি মাত্র দলের অস্তিত্ব স্বীকৃত হলে দেশবাসীর মধ্যে একতা বৃদ্ধি পায় এবং সংহতি বজায় থাকে। কারণ দেশের জনসাধারণ একটি মাত্র রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় এবং সম মতাদর্শের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ হয়। এর ফলে জাতীয় সংহতি ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনপ্রকার দ্বিমতের অবকাশ থাকে না। জাতীয় ঐক্য বিধানে একটি মাত্র দল অধিক সক্রিয়

২. জরুরি অবস্থার উপযোগী : একদলীয় ব্যবস্থায় জাতীয় প্রয়োজনে বা জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। একাধিক রাজনৈতিক দল থাকলে নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত করা যায় না। তার ফলে জরুরি অবস্থায় দেশ বিপদে পড়ে। কিন্তু একদলীয় ব্যবস্থায় নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে মতৈকা থাকে। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে এবং দৃঢ়তার সাথে তা কার্যকর করতে অসুবিধা হয় না।

৩. দলীয় শৃঙ্খলা বিধান : রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বাধার কারণ হলো দলসমূহের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করা দলীয় শৃঙ্খলা না থাকলে জনসাধারণের মধ্যেও এ মূল্যবোধের অবক্ষয়া দেখা যায়। এ রকম বিশৃঙ্খল পরিবেশে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু একটি মাত্র দল থাকলে কঠোরতার সাথে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়। তাতে জনসাধারণের মধ্যে শৃঙ্খলা মান্য করার প্রবণতা জন্মে।

৪. দ্রুত উন্নতি বিধান : একটি মাত্র দল থাকলে দেশের উন্নতি সাধন সহজতর হয়। দল ঘোষিত নীতি অনুসারে দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে মনের মত গড়ে তুলতে পারে। এতে দেশ দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। দেশের স্বীকৃত একমাত্র দলটি যদি জনকল্যাণের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনস্বার্থ সাধনে আত্মনিয়োগ করে তাহলে দেশের সামগ্রিক উন্নতির পথ উন্মুক্ত হয়।

৫. সরকারের স্থায়িত্ব: একদলীয় ব্যবস্থায় সরকার বিশেষভাবে স্থায়ী হয়। স্থায়িত্বের ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে বলে সরকার জনকল্যাণ সাধনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারে। দেশের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে অধিক প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো সুদৃঢ় ও স্থায়ী সরকার।

৬. অপব্যয় হয় না: একদলীয় শাসনব্যবস্থা অপব্যয়ের ত্রুটি থেকে মুক্ত। একদলীয় ব্যবস্থার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্যগণ নির্বাচিত হতে পারেন, নির্বাচনের জন্য নিপুল অর্থ অপচয়ের প্রয়োজন হয় । বহুদলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পাদন করার জন্য বিপুল অর্থের অপচার ঘটে। একদলীয় ব্যবস্থায় ঐ অর্থ উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় করা যায়।

৭. নির্দিষ্ট নীতি ও কর্মপন্থা : একদলীয় ব্যবস্থায় যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা হলো
গণতন্ত্রের মূলনীতি। একাধিক দলের অস্তিত্ব প্রকৃত গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না, কারণ হিসেবে বলা যায়,
বহুদলীয় ব্যবস্থা দেশের জনসাধারণের মধ্যে অনৈক্য ও বিরোধ সৃষ্টি করে। দেশ বহুবিধ দলীয় আদর্শে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ফলে গণতন্ত্রের মূলনীতি অনুসরণ সম্ভব হয় না।

৮. দক্ষ শাসন : একদলীয় ব্যবস্থা আপাতদৃষ্টিতে সহজ সরল। বহুদলীয় ব্যবস্থার ন্যায় এখানে সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রচার ব্যবস্থায়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রভৃতি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকে। ফলে একদলের আওতায় শাসনব্যবস্থা দক্ষ হয়ে উঠে।

৯. দ্রুত সিদ্ধান্ত : একটি মাত্র নল থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হয় না। বিল বা বহুদল থাকলে সরকারের পক্ষে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এতে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়।

১০. নোংরামি রোধ : দেশে অনেক রাজনৈতিক দল থাকলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করে না। বিভিন্ন দলের নানা প্রকার আদর্শ ও প্রচারণা প্রক্রিয়াতে যে নাজুক পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা নোংরামি আর কূট চালে ভরে যায়। এ পরিস্থিতি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনুকূল নয় কিন্তু একটি দল থাকলে নোংরামি রোধ করা খুবই সহজ।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করলে অনেক সুফল বয়ে আসে। কারণ এতে করে বিভিন্ন জনের মধ্যে একটা সংহতির সৃষ্টি হয়। একদলীয় ব্যবস্থায় দলের মধ্যে একটা সুশৃংখল অবস্থা বিরাজ করে, শাসনব্যবস্থার দক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাছাড়া সরবরাহের স্থায়িত্ব রক্ষা ও দ্রুত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও একদলী ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাই বলা যায় একদলীয় শাসনব্যবস্থার অনেকগুণ লক্ষ্য করা যায়।