বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিকাশ আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

১.বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিকাশ আলোচনা কর

অথবা, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ উল্লেখ করা।
অথবা, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিবর্তন উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অত্যন্ত পূর্ণ রাজনৈতিক দল ব্যতীত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব আজ সর্বজনস্বীকৃত। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মতাদর্শের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পুরোধা প্রোট এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তায় রাজনৈতিক দলের মতাদর্শগত বিকাশ ঘটেছে। সে সূত্র ধরে বর্তমানে ইং এবং এ উপমহাদেশে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিকাশ ঘটেছে। এ দলগুলো রাষ্ট্রের কার্যাবলি সম্পাদনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিকাশ : বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিভিন্ন মতাদর্শের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিকাশ সাধিত হয়েছে। নিজে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিদলীয় রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার এক প্রক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থাকে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের একটি উৎকৃষ্ট হিসেবে গণ্য করেছেন। মার্কিন দলীয় ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিচয় পাওয়া যায়।

১. দ্বিদলীয় ব্যবস্থা : মার্কিন দলীয় ব্যবস্থার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার ছিল রূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় স্তরে দুটি বৃহৎ দলের একাধিপতা অটুট আছে। ক্লিনটন সিটার (Clinton Rossiter) বলেছেন, “The most momentous fact about the pattern of American politics is that we live under a persistent, obdurate. one might almost say tyrannical, two-party system.” জাতীয় স্তরে এই বৃহৎ দুটি দল হলো গণতন্ত্রী দল এ সাধারণতন্ত্রী দল। তবে এদের পাশাপাশি অন্যান্য দল থাকলেও তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব খুবই কম।

২. আঞ্চলিকতা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রী দল ও সাধারণতন্ত্রী দল দুটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক স সাধারণতন্ত্রী দল মূলত উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের এবং গণতন্ত্রী দল দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। ১৯৩২ সালের আগে পর্যন্ত এই আঞ্চলিকতার মানসিকতা এমন তীব্র ছিল যে উত্তরাঞ্চলে গণতন্ত্রী দলের এবং দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণতরী দলের অস্তিত্ব বলতে গেলে অনুপস্থিত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই আঞ্চলিকতাবাদই সংকীর্ণতাবাদের জন্য দিয়েছে।

৪. নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের অভাব : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সামাজিক ভিত্তি বা আদর্শগত বিচারে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। উভয় দলই সমাজতন্ত্রের বিরোধী এবং ধনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক। রাজনৈতিক মতাদর্শের সংঘাত দল দু’টির মধ্যে অনুপস্থিত। ৪. দলীয় সংহতি ও শৃঙ্খলার অভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থায় সংহতি ও শৃঙ্খলার অভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই সদস্যদের মধ্যে দলীয় নিয়ন্ত্রণ বা সংহতি খুব একটা দেখা যায় না। বস্তুতপক্ষে বিকেন্দ্রীকৃত দলীয় সংগঠন, রাজ্যদলের রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, রাজাদলের আত্মনির্ভরশীলতা প্রকৃতি

৫. দলীয় সমর্থনের ভিত্তিহীনতা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিকতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ভোটারদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় সংহতি ও শৃঙ্খলাকে দুর্বল করেছে।ভোটদানের প্রবণতা প্রবল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন দলের বিষয়কে শুনিশ্চিত করার করার স্থায়ী ভিত্তি নেই। শ্রেণিগত আনুগত্য এবং কর্মসূচির দিক থেকে দু’টি দলের কোন মৌলিক আতমা না থাকনা ভোটদাতাদের মধ্যেও দলীয় আনুগত্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়।

৬. স্বার্থগোষ্ঠীর প্রাধান্য : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় ব্যবস্থায় স্বার্থগোষ্ঠীর প্রাধান্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। প্রতিটি দলেই স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের প্রভাব প্রতিপত্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বার্থগোষ্ঠীগুলোর উদ্দেশ্য হলো দলের নীতিকে নিজের সাথের অনুকূলে প্রভাবিত করা। দলের আর্থিক ব্যয়তার, প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনী প্রচার অবস্থা প্রকৃতি বিষয়ের সাথে স্বার্থগোষ্ঠীগুলোর যোগাযোগ থাকে।

৭. বিকেন্দ্রীভূত দলীয় সংগঠন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রী ও সাধারণতন্ত্রী বিকেন্দ্রীভূত। উভয় দলই হলো কার্যত অঙ্গরাজ্যের দল বা আঞ্চলিক দল। কোন দলের কোন জাতীয় নেতা রাজা রে নীতি বা মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করতে পারেন না। আঞ্চলিক বা রাজ্য দলগুলো স্ব-স্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও আত্মনির্ভরশীল।

খ. যুক্তরাজ্যের দলীয় ব্যবস্থা : গ্রেট ব্রিটেন হলো পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থার মাতৃভূমি। তাই ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় দলীয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব ও গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। সরকার গঠন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রসার, জনমত গঠন, সরকার এবং জনসাধারণের মধ্যে সংযোগ সাধন, বিভিন্ন স্বার্থের গ্রস্থিবন্ধন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থের সামসা বিধান সর্বত্রই দলীয় ব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষণীয়। নিম্নে গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১.বহুদলীয় ব্যবস্থা: ব্রিটেনে সুস্পষ্ট দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বর্তমান। ব্রিটেনে দু’টি মূল দল শ্রমিক দল ও রক্ষণশীল দল ছাড়াও ছোটমাটো আরও দু-একটি দল আছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। দু’টির বেশি রাজনৈতিক দল থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মাত্র দু’টি দলের প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২. কর্মসূচিভিত্তিক দল : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত কর্মসূচিভিত্তিক। প্রত্যেক দল নির্বাচনের প্রাকালে নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করে। দলীয় কর্মসূচি প্রচারের মাধ্যমে প্রতিটি দল ভোটদাতাদের কোট কামনা করে।

৩. দলীয় শৃঙ্খলা : ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়। এ শৃঙ্খলাবোধ বিল ব্যবস্থার অন্যতম সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয়
সংগঠনের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। দলের আঞ্চলিক ও শাখা সংগঠনগুলোকে এবং দলের সংসদীয় শাখাকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশকে মান্য করে চলতে হয়। শ্রেণিভিতিক ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থাকে পুরোপুরি শ্রেণিভিত্তিক বলা যায় না। শ্রমিক দল মূলত শ্রমিক ও দরিদ্র শ্রেণির সমর্থনপুষ্ট। কিন্তু রক্ষণশীল দল সমাজের বিভিন্ন অংশের সমর্থন লাভ করে থাকে। প্রকৃত প্রস্তাবে ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক। তাই রাজনৈতিক দলগুলো শ্রেণিগত কোন চরম পথে পা বাড়ায় না।

৫. রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সম্পর্ক: ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ধনিষ্ঠ যোগাযোগ দেখা যায়। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট একাধিক পেশাদার গোষ্ঠী ও শ্রমিক সংগঠন থাকে। নির্বাচনের সময় এসব গোষ্ঠী রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচারকার্য চালায়, অর্থ সংগ্রহ করে, এমনকি রাজনৈতিক দলের জ প্রার্থী মনোনীত করে থাকে

৬. সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার গঠনই লক্ষ্য : ব্রিটেনের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সংসদীয় পদ্ধতিতে রাজনৈতিক তথ্য সরকারি ক্ষমতা দখল করতে চায়। কোন দলই ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে অসাংবিধানিক পদ্ধতিকে সমর্থন করে না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করা এবং কার গঠন করে দলীয় কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করা।

গ. ফ্রান্সের দলীয় ব্যবস্থা : ফ্রাদের দলীয় ব্যবস্থা বহুদলীয় প্রকৃতির। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এখানকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকে। নিম্নে ফ্রান্সের দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি উল্লেখ করা হলো।

১. বহুদলীয় ব্যবস্থা : ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে বহুদলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়। ফ্রান্সের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে সবসময়ই এক ডজনেরও বেশি জাতীয় দল অংশগ্রহণ করে। এই বহুদলীয় ব্যবস্থাই ফরাসি রাজনীতিকে অতিমাত্রায় জটিল করে তুলেছে।

২. দলীয় শৃঙ্খলা ও সংহতির অভাব : ফ্রান্সের দলীয় ব্যবস্থায় দলীয় সংহতি ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর প্রধান কারণ হলো ফরাসি জাতি প্রখর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী। দলীয় শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাকে তারা গ্রাহ্য করে না।

৩. সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাব : ফরাসি নলীয় ব্যবস্থায় সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ফরাসি রাজনৈতিক দলগুলো পার্লামেন্টের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। বহুদলীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা এ বিষয়ে বিনতের কোন অবকাশ নেই।

৪. স্থায়িত্বের অভাব: পরিবর্তনশীলতা ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ফ্রান্সে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান এবং অতি অল্পকালের ব্যবধানে এ সকল দলের অবলুপ্তির ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। অর্থাৎ ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্থায়িত্বের অভাব লক্ষ্য করা যায়।

৫. দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাব : রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সহমতের অভাব ফ্রান্সের দলীয় ব্যবস্থার একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে সমঝোতা ও ঐকমত্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। মূলত বামপন্থি ও দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
দৃষ্টিভঙ্গির আনানের পার্থক্য দেখা যায়।

খ. চীনের দলীয় ব্যবস্থা: চীন হলো একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা শ্রমিক কৃষকের মৈত্রীর উপর প্রতিষ্ঠিত এবং শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হয়। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা হলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি।

বৈশিষ্ট্য : জাতীয় কংগ্রেস ও তার দ্বারা নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি হলো চীনের পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বকারী সংস্থা।
চীনে আটটি কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়াও আটটি গণতান্ত্রিক দল বিদ্যমান রয়েছে। পার্টির প্রত্যক সদস্যকে পার্টি সংগঠনের, সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগুরুর অধস্তন পার্টি সংগঠনগুলোকে ঊর্ধ্বতন সংগঠনের এবং পার্টির সব সংগঠন ও সদস্যকে জাতীয় কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে থাকতে হয়।

৩. ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থা : ভারতের দলীয় ব্যবস্থা বহুদলীয় ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়। এ দলগুলোর মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ভিত্তি, সাংগঠনিক কাঠামো, কর্মসূচি এবং কর্মপরিচালনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। ভারতে জাত-পাত, উপজাতি, ধর্ম ও ভাষাভিত্তিক অসংখ্য দল গঠিত হয়েছে। দলীয় ব্যবস্থায় ব্যক্তি প্রাধান্য ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এখানে চরম বামপন্থি থেকে চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান।

চ. বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোই জনগণের মধ্যে চেতনা জাগ্রত করে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাদেশে বহুদল ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাংলাদেশে বামপন্থি ও ডানপন্থি উভয় ধরনের দলই লক্ষ্য করা যায়। প্রত্যেকটি দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিদ্যমান। দলীয় নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে এ কোলনগুলো সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জোটবদ্ধ দলীয় ব্যবস্থা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ দলের জন্য হয়েছে কিছু ব্যক্তিত্বের কারণে। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সুসংগঠিত নয়।সার্বিক আলোচনায় বলা যায় যে, তৎকালীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় একটা এককেন্দ্রিক দলীয় ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটে। তার পরবর্তীতে ব্রিটেনে অ্যাংলো স্যাকসন জাতি ইংল্যান্ডে একটা দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার মডেল স্থাপন করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও দ্বিদলীয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে আমাদের উপমহাদেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ সাধিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে জোটবদ্ধ দলীয় ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত আলোচনা হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, বাংলাদেশ ও
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর স্বরূপ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। এ সকল দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলের ভিত্তিতে গঠিত হয়। তাই কোন কোন দেশে বিদলীয় ব্যবস্থা এবং আবার কোন কোন দেশে বহুদলীয় ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এখনো গণতান্ত্রিক দলীয় ব্যবস্থার উপর তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তাই বিশ্বে গণতান্ত্রিক দলীয় ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা বর্তমানেও বজায় রয়েছে।