পরোক্ষ নির্বাচনের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ আলোচনা কর ।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, পরোক্ষ নির্বাচনের সুফল আলোচনা কর।
অথবা, পরোক্ষ নির্বাচনের ইতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা কর ।

উত্তরঃ ভূমিকা : জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের ভোটাধিকার প্রবর্তনের সাথে সাথে নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ হবে না পরোক্ষ হবে তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্য যেমন নির্বাচকমণ্ডলীর আয়তনের উপর নির্ভরশীল, তেমনি নির্বাচন পদ্ধতির উপরও নির্ভরশীল। প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি ও পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্র বলতে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে বুঝায় ।

উদাহরণ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। তৎকালীন পাকিস্তানে অভিনব মৌলিক গণতন্ত্র সৃষ্টিতে পরোক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত।

পরোক্ষ নির্বাচনের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ : পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির নিম্নলিখিত গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ রয়েছে। যথা:

১. ব্যয় কম পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে খরচ কম হয়। এই নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেন তারা অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত, বুদ্ধিমান ও যোগ্য। তাই এ ব্যবস্থায় অযথা অর্থ ব্যয় করা হয় না।

২. যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন : পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে থাকে। এ ব্যবস্থায় অধিক বিচারবিবেচনার মাধ্যমে দু’দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বলে শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও রাজনীতি সচেতন সুযোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হন। ফলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. আবেগ ও উন্মাদনা কম : পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটারের সংখ্যা কম থাকায় আবেগ ও উন্মাদনার আশক্ষা কম থাকে। অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ধীর ও স্থিরভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। ভোটারের সংখ্যা বেশি হলে যুক্তির চেয়ে আবেগই বেশি কাজ করে।

৪. যোগ্য নেতৃত্ব : পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ভোটারগণ অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পারে। প্রাথমিক ভোটারগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের কাছের মানুষকে নির্বাচন করতে পারে, কেননা তাদের সাথে জনগণের প্রত্যক্ষ চেনা জানা থাকে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে নেতা নির্বাচন করা এত সহজ হয় না।

৫. দলীয় প্রভাবমুক্ত : পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্বাচকমণ্ডলী দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। কেননা এ পদ্ধতিতে নির্বাচনের চূড়ান্ত দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে ‘নির্বাচক সংস্থা’ বা জনপ্রতিনিধিদের উপর। এ কারণে নির্বাচক স্বীয় বিচার বিবেচনায় প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পায়।

৬. দুর্নীতিমুক্ত : পরোক্ষ নির্বাচনে দুর্নীতির সম্ভাবনা কম থাকে। এতে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন দ্বিতীয় পর্যায়ে। তাই এক্ষেত্রে দলীয় প্রচার, দুর্নীতি ও কোনরকম উত্তেজনার সম্ভাবনা থাকে না। ফলে জাতীয় সংহতি ও স্বার্থ রক্ষিত হয়।

৭. প্রতারণার অবসান : এ ব্যবস্থায় কোনপ্রকার প্রতারণামূলক বক্তব্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে না।
সুযোগ কম থাকে।এতে জনসাধরণকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া এ নির্বাচনে দলীয় স্লোগান ও প্রচারাভিযানের।

৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : পরোক্ষ নির্বাচনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তাছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশও বিরাজমান থাকে। কেননা এতে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচারকার্য চালানো অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং কোনপ্রকার দলীয় বিবান, আবেগ ও ভাবপ্রবণতার স্থান নেই।

৯. দক্ষতার সাথে নির্বাচন : পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় “নির্বাচক সংস্থা’ দক্ষতার সাথে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকেন। সাধারণ ভোটারদের অধিকাংশ অশিক্ষিত ও অজ্ঞ। তুলনামূলক বিচারে মধ্যম শ্রেণি তাদের চেয়ে অধিক দক্ষ, তাই যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।

১০. জনকল্যাণ সাধন : পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়। ফলে তার দ্বারা জনকল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রার্থী জনগণের অধিকার ও প্রাপ্তিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যার কারণে অধিক জনকল্যাণ ত্বরান্বিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, উপরের আলোচনায় পরোক্ষ নির্বাচনের যেসব সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে বুঝা যায় সুষ্ঠ ও সঠিক নির্বাচনে পরোক্ষ নির্বাচনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই পরোক্ষ নির্বাচনকে কোন অংশে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।