শাসন বিভাগ কী? শাসন বিভাগের সংগঠন আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, শাসন বিভাগ বলতে কী বুঝ? শাসন বিভাগের সংগঠন উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : সরকারের কার্য পরিচালনার জন্য তিনটি বিভাগ রয়েছে। তার মধ্যে আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনকে কার্যকরী করার জন্য যে বিভাগ রয়েছে তাকে শাসন বিভাগ বলে। বর্তমানে শাসন বিভাগের কার্যপরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আইন বিভাগের স্থলে শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শাসন বিভাগ : শাসন বিভাগ বলতে সরকারের সেসব কর্মচারীকে বুঝায় যারা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত যাবতীয় আইন কার্যকর ও বলবৎ করার কাজে নিয়োজিত থাকে। ব্যাপক অর্থে আইন বলবৎকরণে নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত হয়। অর্থাৎ প্রধান কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চৌকিদারের ন্যায় সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই শাসন বিভাগের অন্তর্গত। অন্যভাবে বলা যায়, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ ছাড়া সরকারি কাজে নিযুক্ত সকল ব্যক্তিই শাসন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। সংকীর্ণ অর্থে শাসন বিভাগ বলতে শাসন বিভাগের নীতি ও কার্যক্রম নির্ধারণে নিয়োজিত৷শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে বুঝায় ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে শাসন বিভাগের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

ডুভারজার (Duverger) এর মতানুসারে, “আইনসভা ও বিচার বিভাগ ব্যতীত সরকারি কাজে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাই শাসন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।”

প্রফেসর বার্কার (Prof. Barker) বলেছেন, “শাসন বিভাগ হলো আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ ব্যতীত সরকারি কাজে নিযুক্ত সকল কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত বিভাগ।” ম্যাকাইভার (Maclver) বলেছেন, “শাসন বিভাগ হলো শাসনব্যবস্থার নীতি ও কার্যক্রম নির্ধারণে নিয়োজিত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ।

অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Finer) এর ভাষায়, “শাসন সংক্রান্ত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বাতিনা সমন্বয়ে শাসন বিভাগ গঠিত।”

ডিপযুক্ত প্রদত্ত সংজ্ঞাগুলোর প্রেক্ষিতে শাসন বিভাগ বলতে সেসব পদাধিকারী ও সংস্থার সমষ্টিকে বুঝায়, যারা আইনের মাধ্যমে নির্ণীত এবং প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় ইচ্ছা প্রয়োগের সাথে জড়িত। এ অর্থে শাসনের সাথে কেবল রাষ্ট্রীয় প্রধানরাই জড়িত নন; মন্ত্রিগণ, অধীনস্থ শাসন বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক কর্মচারিগণও জড়িত। রাষ্ট্রীয় প্রধান, মন্ত্রিগণ এবং প্রশাসনের স্থায়ী কর্মচারী বা আমলাতন্ত্র নিয়ে শাসন বিভাগ গঠি।

শাসন বিভাগের সংগঠন : শাসন বিভাগের গঠন ও কার্যাবলির ভিত্তিতে শাসন বিভাগকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা :

১. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ ২.শাসন বিভাগের অরাজনৈতিক অংশ।

শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে আবার দুটি অংশে ভাগ করা যায় যথা:

ক. সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী এবং

খ. সহযোগী রাজনৈতিক পদাধিকারী।

বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার শীর্ষ পদাধিকারী প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি, চ্যান্সেলর, রাজা ও রানী ইত্যাদি নামে পরিচিত। তাদের মধ্যে কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে, কেউ মনোনয়ন আবার কেউ নির্বাচিত হন। প্রশাসনিক কার্যে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত কর্মচারিগণ হলেন অরাজনৈতিক অংশের অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এবং রাষ্ট্রকৃতাক বা রাষ্ট্রভূত্যক নামে পরিচিত। অনেক সময় এদেরকে আমলাও বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আমরা শাসন বিভাগকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করি না, বরং সংকীর্ণ অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। এ অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী এবং তার উপদেষ্টামণ্ডলীকে বুঝায়। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার নির্বাহী বা শাসন বিভাগ বলতে সেদেশের প্রেসিডেন্ট ও কেবিনেট সদস্যদের বুঝানো হয়।আবার ব্রিটেনের নির্বাহী বিভাগ বলতে সেদেশের রাজা বা রানী, প্রধানমন্ত্রী ও তার কেবিনেট সদস্যদের বুঝানো হয়।

উপসংহার: আলোচনা শেষে বলা যায়, সরকারের যে বিভাগ সরাসরি শাসন পরিচালনায় নিয়োজিত তাকে শাসন বিভাগ বলে। আধুনিক শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগের ভূমিকা খুব বেশি কারণ অদক্ষ আইনসভা থাকার কারণে একটি দেশের সকল কাজ এখন শাসন বিভাগের সাহায্য ছাড়া সমাধান হয় না। কেননা শাসন বিভাগ গঠিত হয় মেধাবীদের নিয়ে।