অথবা, গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : একা দুটি বিপরীতধর্মীরা। তাই এদের মধ্যে যাদের পার্থক্য বিদ্যমান। গণতন্ত্রকে যেমন মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করা হয়. একনায়ককেও তেমনি মানবজাতির অভিশাপ বলে মনে করা হয়। প্রাচীন কাল থেকেই গণতন্ত্র অনেক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে একটি জনপ্রিয় বা হিসেবে গোড়াপত্তন করেছে। অপরদিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি, জার্মানি ও স্পেনে একনায়কতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের পার্থক্য : গাত একনায়কতন্ত্রের পানি না করা হলো:
১.ক্ষমতার উৎস: গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন। গণতন্ত্রে ক্ষত। কিন্তু এক হলো এক ব্যক্তি বা একদলের শাসন। একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস হচ্ছে এক ব্যক্তি বা দলীয় চক্র।
২. ব্যক্তিস্বাধীনতা : গণতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী।
৩. রাজনৈতিক দল : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বহু রাজনৈতিক দল বিদ্যমান থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একদলীয় শাসনব্যবস্থা নিদ্যমান থাকে।
৪. প্রচার মাধ্যম : গণতন্ত্রে প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর তেমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় না। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর কড়া বিধিনিষিধ আরোপ করা হয়।
৫. আইনসভা : গণতন্ত্রে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করে। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্রে আইনসভা একটি প্রহসনমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
৬. নির্বাচনের ক্ষেত্রে : গণতন্ত্রে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই শাসকদের জনগণের সম্মতি নিতে হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকরা শাসিতের নিকট দায়িত্বশীল থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্থলে প্রহসনমূলক নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।
৭. প্রাধান্যের ক্ষেত্রে : গণতন্ত্রে জনগণের প্রাধান্যই প্রবল। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দল বা রাষ্ট্রের প্রাধান্যই প্রবল। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রই চরম ও চূড়ান্ত কিন্তু গণতন্ত্রে মনে করা হয় ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র।
৮. আইনের শাসন: গণতন্ত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কেননা গণতান্ত্রিক সরকার আইন অনুবর্তন ছাড়া কোন কার্য পরিচালনা করতে পারে না। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্রে আইনের শাসনের বালাই নেই। শাসক শ্রেণির কথাই আইন। সর্বত্র অন্যায়, অত্যাচার, জুলুমের চিত্র দেখা যায়।
৯. জাতীয়তা : গণতন্ত্র আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাসী। কিন্তু একনায়কতন্ত্র উগ্রজাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী।
১০. ভিত্তি: গণতন্ত্র ভানগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। শাসনব্যবস্থা। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি হচ্ছে
রাষ্ট্রায় কর্তৃত্ব ও শক্তি।
১১. সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে : গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন সংখ্যালঘিষ্ঠের সম্মতির সাথে পরিচালিত হয়। এ সরকারের সংবিধানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। সংখ্যালঘুদের মতামতকে সম্মান দেয়া হয়। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে সকলের সম্মতির উপর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। অপরদিকে, একনায়কতান্ত্রিক সরকারে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়
১২. জনগণ ও সরকার: গণতন্ত্রে জনগণ ও সরকার পরস্পর পরস্পরের আয়না স্বরূপ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে ঐরূপ কোন অবকাশ নেই। জনগণের মধ্যে সরকারের স্বরূপ প্রতিফলিত হয় না।
১৩. কল্যাণসাধন ক্ষেত্রে: জনগণের কল্যাণসাধনই হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্য এবং সেজনাই স্থানগণ ও সরকার পরস্পরের কল্যাণ কামনা করে। অন্যদিকে, একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীর কল্যাণই সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয়। এজন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে যদিও বলি দিতে হয় তাও স্বীকৃত।
১৪. শান্তিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে : গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনগণের শান্তিশৃঙ্খলা ও বিকাশধারার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। কিন্তু একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় কেবলমাত্র শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্বারোপ করত সংরক্ষক ও বিকাশধারাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়।
১৫. রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে : গণতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা সমতা ও সুষম গঠননীতির ভিত্তিতে বিতরণ করা সম্ভব। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে তা স্বজনপ্রীতির একরূপদর্শী আত্মসাৎমূলক নীতির ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়। ১৬. নেতৃত্বের ক্ষেত্রে : গণতন্ত্র যৌথ নেতৃত্বে বিশ্বাসী। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্র একক নেতৃত্বে বিশ্বাসী।
১৭. স্থায়িতের ক্ষেত্রে : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থায়ী, শাশ্বত ও সর্বজনীন। অপরদিকে, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অস্থায়ী ।
১৮. দায়িত্বশীলতার দিক দিয়ে : গণতান্ত্রিক সরকার তার দায়িত্ব পালনের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে সরকার তার দায়িত্ব পালনে বা কার্যাবলির জন্য কারও কাছে দায়ী থাকে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, একনায়কতন্ত্র অপেক্ষা গণতন্ত্র একটি সর্বোৎকৃষ্ট, জন সর্বজনীন শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববাসীর নিকট সমাদৃত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অধিবাসীরা নিঃসন্দেহে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে থেকে গর্ববোধ করতে পারে না, বরং লজ্জাবোধ করে। সুতরাং একথা বলা যায় যে, একনায়কত কোন মতেই গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে ।