তুমি গণতন্ত্রকে একটি আদর্শ সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করবে কেন? যুক্তিসহ আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, গণতন্ত্র একটি উত্তম সরকার ব্যবস্থা আলোচনা কর।
অথবা, তুমি কি মনে কর গণতন্ত্র একটি আদর্শ সরকার ব্যবস্থা যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রিসে গণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তখন থেকে অদ্যাবধি এ গণতন্ত্র শব্দটি রাষ্ট্রচিন্তার জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে আসছে এবং আদর্শ শাসনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে। এ গণতন্ত্র কেন আদর্শ শাসনব্যবস্থা তা জানতে হলে গণতন্ত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া।

গণতন্ত্র আদর্শ ব্যবস্থা : অপরাপর শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনামূলক বিচারে গণতন্ত্রকেই আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্যই গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। যেসব যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্রকে আদর্শ শাসনব্যবস্থা বলে মনে করা যায় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. অধিক কল্যাণকর: লাগে নিশ্চিত করা হয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় বলে অধিক পরিমাণে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়। রাজ বা একনায়কতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। কারণ এতে রাজ্য যা বলেছেন, তা এবং তা মানতে বাধা থাকে। কিন্তু গণতন্ত্র যেহেতু জনগণের শাসনব্যবস্থা সেহেতু জনগণের স্বার্থের মূল্যই এখানে বেশি।

২. বুদ্ধ বা মানুষের স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্রবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনসাধারণের বিভিন্ন ধরনের যুক্তি ও মতামতকে প্রভার সাথে গ্রহণ করা হয় এবং বক্তৃতা প্রকাশনা ও বিভিন্ন দলের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে পরামর্শ বা উপদেশ আহ্বান করা হয় যা অন্য কোন মতাবলম্বী রাষ্ট্রে দেখা যায় না।

৩. ব্যক্তির প্রাধান্য স্বীকৃত: ফ্যাসিবাদে থাকে রাষ্ট্রের প্রাধান্য। সমাজতন্ত্রে যেমন শ্রেণির প্রাধান্য তেমনি গ থাকে ব্যক্তির প্রাধান্য। ব্যক্তির নিজস্ব জীবনধারায় কিংবা প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্র অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

৪. আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত: গণতন্ত্রের অন্যতম শর্তই হচ্ছে ‘Rull of law’ বা ‘আইনের শাসন গণতন্ত্রে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। প্রধানমন্ত্রী থেকে একেবারে নিম্নস্বরের লোকটিও, এ রকম আইনের অধীনে থাকে। আইনের প্রয়োগের দিক থেকে এখানে কোন রকম বৈষম্য স্বীকৃত নয়।

৫. দেশপ্রেম সৃষ্টি করে : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জনগণকেই অধিক পরিমাণে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে দেখা যায়। এ শাসনব্যবস্থার জনগণ উপলব্ধি করে যে, দেশের মঙ্গলামঙ্গলের একমাত্র এতু তারা নিজেরাই। তাই এ শাসনব্যবস্থায় জনগণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করে, যা অন্য কোন শাসনব্যবস্থায় তেমন লক্ষ করা যায় ।

৬. বিপ্লবের সম্ভাবনা কম থাকে: এখানে মানুষের দাবিদাওয়া ও অভাব অভিযোগ পূরণের সব পথ খোলা থাকে যে বিপ্লবের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার কোন প্রয়োজন দেখা দেয় না। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দল জানে যে তারা যদি জনস্বার্থ নিয়ে কোন রকম ছিনিমিনি খেলে তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে তারা জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হবে।

৭. জনমত সহজে সৃষ্টি হয়: গণতন্ত্রে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে জনমত যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে অন্য কোন সরকার তা করতে পারে না। যখনই কোন রাজনৈতিক দল জনস্বার্থ উপেক্ষা করে শাসন পরিচালনার প্রয়াস পায়, তখনই জনমত বজ্রনির্ঘোষে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে এবং এ প্রতিবাদের মুখে সরকার অনভিপ্রেত কর্মসূচি বাতিল বা সংশোধনে বাধ্য হয়, যা অন্য ব্যবস্থায় এত বেশি অনুভূত হয় না।

৮. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সমন্বয়: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের মধ্যে যত সহজ এবং সুন্দরভাবে সমন্বয় বিধান করা যায় অন্য কোন শাসনে তা করা যায় না। এর বড় কারণ হলো এই যে, গণতন্ত্রে যেহেতু জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ধারক ও বাহক কাজেই তাদের পক্ষে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যকে উপেক্ষা করে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।

৯. দায়িত্বশীলতা : গণতন্ত্রে শাসিতের কাছে শাসক দায়িত্বশীল থাকে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মন্ত্রিপরিষদ জনগণের কাছে দায়ী থাকে। আবার রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থাকে। এ দায়িত্বশীলতা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে আদর্শ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

১০. সাম্য, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার সংরক্ষণ : তান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাম্য, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার সংরক্ষিত হয়। ব্যক্তির এ তিনটি পবিত্র অধিকার রক্ষার পরিবর্তে যদি কোন সরকার তা ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়, তাহলে জনগণ সে সরকার পরিবর্তন করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অন্য কোন শাসনব্যবস্থায় ব্যক্তির এ অধিকারগুলোর প্রতি আরুত্ব দেয়া হয় না।

১১. সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না: পৃথিবীতে যত শাসনব্যবস্থা আছে তন্মধ্যে গণতন্ত্রই জনমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তাই জনমতের ভয়ে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না।

১২. সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা; গণতন্ত্রে আলাপ আলোচনা ও ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মেয়ো (Henry B. Mayo) এর অভিমত হলো “Democracy is the system best able to produce justice.”

১৩. সাংবিধানিক প্রাধান্য : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাংবিধানিক প্রাধান্য স্বীকৃত। সরকার সংবিধান বহির্ভূত কোন কাজ করতে পারে না। জনকল্যাণমুখী সংবিধান গণতান্ত্রিক আদর্শকে আরো ঊর্ধ্বে তুলে ধরে।

১৪. রাজনৈতিক শিক্ষার বিকাশ : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সকল জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। যার ফলে শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয়। এতে রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ শাসনব্যবস্থা। তাই এটি শুধুমাত্র একটি সরকার ব্যবস্থাই নয়, এটি একটি জীবন ব্যবস্থাও বটে। তাই Lipson মন্তব্য করেছেন, “Of all forms of government known and tried, democracy is the wisest and best.” আর তাই বিশ্বে আজ রাজতন্ত্র বিদিন প্রায় এবং বইছে গণতন্ত্রের জোয়ার।