অথবা, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধর।
অথবা, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উৎপত্তি তুলে ধর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সভ্যতার বিকাশ, রাষ্ট্র গঠন ও সরকার ব্যবস্থাপনায় অদ্যাবধি যতগুলো রাজনৈতিক মতবাদ মানবজাতিকে নাড়া দিয়েছে, গণতন্ত্র তার মধ্যে সর্বপ্রাচীন এবং এর আবেদন চিরন্তন। পেরিক্লিয়ান যুগের এদেশের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সাথে বর্তমান কালের পরোক্ষ প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের বিরাট ব্যবধান থাকলেও শতাব্দীর পথ পরিক্রমায় গণতন্ত্র আজ সমৃদ্ধ হয়ে এক উন্নত জীবন ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে এবং বলা যায়, গণতন্ত্রের সন্তোষজনক বিকল্প নেই।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও এর প্রেক্ষাপট : গণতন্ত্রের এ যাত্রাপথে ইংল্যান্ডের রাজা জন ও বেরনদের মধ্যকার ১২১৫ সালের চুক্তি ‘ম্যাগনাকার্টা’ যুগসন্ধিক্ষণ স্বরূপ। কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে রাজাদের চুক্তি ভঙ্গের কারণে সপ্তদশ শতাব্দীর ইংরেজ দার্শনিক জন লক এর চিন্তা ও লেখনী Two Treatises on Civil Government (1690) এর প্রভাবে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্টের সাথে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৬৮৮ সালে মহান বিপ্লব সংগঠিত হয়। জন লক এর চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি জারিস্ট ও দার্শনিক মন্টেস্কু তাঁর ‘The Spirit of Laws ‘ (1748) গ্রন্থের মাধ্যমে আধুনিক সাংবিধানিক গণতন্ত্রের এক বুদ্ধিভিত্তিক রচনা করেন। গণতন্ত্রের এ আলোকবর্তিকা সমসাময়িক ফ্রান্সের রুশো, স্কটল্যান্ডের ডেভিট হিউম, জার্মানির ইমানুয়েল কান্ট এবং নতুন বিশ্বের প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র। আমেরিকার থমাস জেফারসন এবং বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমুখকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের ‘The Rights of Law’ এবং আমেরিকার ‘The Bell of Rights এর ঐতিহাসিক ঘোষণা এ ধারায় তাদের চিন্তার ফসল।গণতন্ত্রের ইতিহাসে ধীরভাবে প্রবাহিত নিয়ত অগ্রগতির ইতিহাস নয়, বরং পর্যায়ক্রমিক ভরঙ্গের উত্তরণ যা অগ্রগতি অর্জন করেছে। পশ্চাৎ অপসরণ ঘটেছে, আবার এগিয়েছে এবং বিজয়ের উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হান্টিংটন আধুনিক গণতন্ত্রের ইতিহাসকে তিনটি দীর্ঘ তরঙ্গে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে, প্রথম তরঙ্গের শুরু উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সংখ্যক পুরুষ নাগরিকের ভোটাধিকার অর্জন পর্যন্ত বিস্তৃত এবং বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এ সময়ে বিশ্বে ঊনত্রিশটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। কিন্তু ১৯২২ সালে ইতালিতে মুসোলিনীর ক্ষমতারোহণের মধ্য দিয়ে প্রথম তরঙ্গের মন্দা বা পশ্চাৎমুখিতা শুরু হয় এবং এ ধারা ১৯৪২ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময়ে বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা বারোটিতে নেমে আসে।
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় গণতন্ত্রের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিসে সীমিত আকারে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র একটা আদর্শ শাসনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।