অথবা, সরকারের গতানুগতিক শ্রেণিবিভাগ অপর্যাপ্ত আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : সরকার হলো রাষ্ট্রের একটি মৌলিক উপাদান। সরকারকে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা পরিচালক হিসেবেও অভিহিত করা যায়। এটি একটি সর্বজনীন সংস্থা। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়। বর্তমান যুগে
‘সরকার’ ধারণাটি আদিম সমাজের বিশৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর শৃঙ্খলাবদ্ধতা এবং যুগে যুগে গবেষণালব্ধ কর্মের অভূতপূর্ব ফলাফল । প্রাচীন কালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত সরকারের কর্মপদ্ধতির ধারণা পরিবর্তিত হচ্ছে।
সরকারের শ্রেণিবিভাগ : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদিকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। কিন্তু কেউ সরকারের সর্বজনবিদিত শ্রেণিবিভাগ প্রদানে সক্ষম হন নি। তাই সরকারের শ্রেণি বিভাগ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে আজও বেশ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
সরকারের গতানুগতিক শ্রেণিবিভাগ পর্যাপ্ত নয় : সরকারের গতানুগতিক শ্রেণিবিভাগ পর্যাপ্ত নয়। কেননা বাস্তবিকপক্ষে রাষ্ট্রে দু’ধরনের সরকার দেখতে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে গোষ্ঠীতন্ত্র বা কতিপয় তন্ত্র এবং অপরটি হচ্ছে গণতন্ত্র। গোষ্ঠীতন্ত্র বা কতিপয় তন্ত্র গোষ্ঠীতন্ত্রে কতিপয় ব্যক্তির হাতে শাসনক্ষমতা থাকলেও এখানে একজন প্রধান নেতার নেতৃত্বে শাসনকার্য পরিচালিত হয়। আবার যেখানে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির হাতে শাসনক্ষমতা থাকে, সেখানে তিনি সর্বদা মুষ্টিমেয় শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। আর এ গোষ্ঠীতন্ত্রে গোষ্ঠীয় ক্ষমতার কাঠামো অনুসারে একে সমাজতন্ত্র, সম্রাটতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র বলা হয়।আবার এক ব্যক্তির শাসনের মধ্যেও পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র এক নয়। এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। অন্যদিকে, সীমাবদ্ধ রাজতন্ত্র গণতন্ত্রের পর্যায়ভুক্ত হলেও একচ্ছত্র রাজতন্ত্র গণতন্ত্রের ঠিক বিপরীত।
গণতন্ত্র : বর্তমানে পৃথিবীতে গণতন্ত্র শব্দটি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সরকার ব্যবস্থা হলো গণতন্ত্র ।গণতন্ত্র হলো এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে সরকার পরিবর্তনের রীতিসিদ্ধ পদ্ধতি, সাংবিধানিক সুযোগ, অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা, একাধিক রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও স্বাধীন বিচার বিভাগ ইত্যাদি বিদ্যমান। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেছেন, “সরকারের গতানুগতিক শ্রেণিবিভাগ রীতি আর একটি দিক দিয়ে অপর্যাপ্ত। এ স্থুল সাংবিধানিক মানদণ্ড অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন প্রকার সরকারকে শ্রেণিবিভাগ করতে পারি না, যেগুলোকে স্পষ্টরূপেই পৃথক করা উচিত।”
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, যত প্রকার সরকার আছে, সবগুলোই একরকম নয়, এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয়। তাই কেবলমাত্র সংবিধানের মানদণ্ডে এদের গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ করা পর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হবে না।